বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানান।
এদিকে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এর আগে শনিবার (১৩ মে) সকাল সাড়ে নয়টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১৪-তে জানানো হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ আরও বাড়তে শুরু করেছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থান করছে।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্বে দিকে আগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ০৬টা থেকে সন্ধ্যা ০৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার (১৩ মে) রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবাল ঘূর্ণিঝড় আগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
এজন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
জেনে নিন সমুদ্রবন্দরের জন্য কখন কোন সংকেত ও সংকেতগুলোর অর্থ
১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত
জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার যা সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত
বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত
বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
৫ নম্বর বিপদ সংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নম্বর বিপদ সংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপদ সংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত
আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
নদীবন্দরের জন্য সংকেতগুলো ও সংকেতগুলো অর্থ
১ নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত
বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এ সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।
২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত
বন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমতূল্য তীব্রতার একটি ঝড় যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিলোমিটার বা তদুর্ধ্ব। নৌ-যান এদের যে কোনোটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ- যানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব প্রকার নৌ-যানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত
বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি। সব প্রকার নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :