নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পরমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ পারমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে স্থানীয় একটি রিসোর্টে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ) বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণের লাইসেন্স দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে।
এ লাইসেন্স প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক জ্বালানি আমদানির সক্ষমতা অর্জন করল বলে জানিয়েছেন পরমাণু সংশ্লিষ্টরা।
বিএইআরএ`র প্রকল্প পরিচালক ড. সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেগুলেটিং ও সুপারভিশন করে। পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সংস্থাকে আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। রূপপুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষ লাইসেণ্সের আবেদন করার পর গত এক বছর ধরে শর্ত পূরণের নথি জমা দিয়েছেন। বারংবার নথি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন পূর্বক সন্তুষ্ট হওয়ায় লাইসেন্স দিতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও জ্বালানি পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আমরা লাইসেন্স প্রদান করছি। এর মধ্য দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) আমদানিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
রূপপুর এনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে এবং অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে আমরা প্রতিটি ধাপে আইএইএ’র নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি।
জ্বালানি আমদানি ও পরিবহনের ক্ষেত্রে আইএইএ-এর প্রজ্ঞাপন লাগবে জানিয়ে ড. শৌকত বলেন, রাশান ফেডারেশনের রপ্তানি নীতির আলোকে অনুমতি লাগবে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, সাংগঠনিক অবকাঠামো, দক্ষতা ও জনবল তৈরি করতে হয়। সকল শর্ত পূরণ করেই আমরা জ্বালানি সংরক্ষণ, আমদানি ও পরিবহনের জন্য লাইসেন্স পেলাম।
ড. শৌকত আকবর বলেন, বৈশ্বিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে ব্যবহারিক পর্যায়ে, আমরা কনস্ট্রাকশনের মধ্য দিয়ে একবার গেলাম, আরেকবার জ্বালানি আমদানির মধ্য নিউক্লিয়ার এনার্জি পরিচালনাকারী দেশের মর্যাদায় উন্নীত হবো। ২০২৩ সাল থেকেই ‘প্রি-অপরাশেনাল কমিশনিং’ বা পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে চাই। অপারেশনাল কমিশনিংয়ের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো অবকাঠামো, ফিজিক্যাল প্রোডাকশন, অফসাইট টেলিকমিউনিকেশন, জরুরি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো জড়িত। আইএইএ’র নির্দেশনা মেনে সেগুলো নির্ধারিত সময়েই সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, পারমাণবিক জ্বালানির আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তির পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। নিউক্লিয়ার ক্লাবের মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে বাংলাদেশ। এতে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।
বিএইআরএ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বায়রার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হোসেন সভাপতিত্বে লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাশান ফেডারেশনের রোসটেকনাজোরের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রোসাটমের ডেপুটি ডিরেক্টর এ ওয়াই পেত্রোভ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অশোক কুমার পাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা নদীর পাড়ে ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে থ্রি প্লাস প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর। প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১,২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
একুশে সংবাদ/জ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :