বিগত ১৬ বছরে মেডিকেলে প্রশ্নফাঁস হয়েছে ১০ বার। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে বেশ কয়েকটি চক্র। এর মধ্যে সাত চিকিৎসকসহ প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই এক শ্রেণির চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সিআইডির তদন্তে বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয়ের প্রমাণ মিলেছে। এই চক্রের সদস্য ৮০ জন হলেও ৭ জন চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
২০২০ সালে মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় দায়ী ব্যক্তিরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। তাদের অনেকেই প্রাইমেট মেডিকো ও থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান সিআইডি প্রধান।
সিআইডির তদন্তে আরও উঠে আসে, ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন অভিযুক্তরা। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ১৯টি, ল্যাপটপ ৪টি, নগদ দুই লাখ ১১ হাজার টাকা, বিদেশি মুদ্রা ১৫ হাজার ১০০, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ১৫টি ও ভর্তির প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডি প্রধান জানান, ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র পেয়ে যারা চিকিৎসক হয়েছেন বা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ছেন তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিআইডি।
আলী মিয়া বলেন, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। সারা দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন। পাবলিক পরীক্ষা এলেই এক শ্রেণির চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নফাঁস করে এবং গুজব ছড়িয়ে পরিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্তও করে। সারা দেশে প্রশ্নফাঁস বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিআইডির বিশেষায়িত একাধিক দল কাজ করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। বিগত এক মাসে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রটির ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেফতারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার।
সিআইডি প্রধান বলেন, তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন। তাদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আলী মিয়া আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়, যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যহত রয়েছে।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :