আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর সেসময় দেশে প্রতিবাদ না হলেও বিশ্বনেতা ও বিশ্ব গণমাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ খবরে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায়। স্তম্ভিত বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যায় তাদের প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘশ্বাসের পাশাপাশি হৃদয় নিংড়ানো মন্তব্য করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে এসব নিন্দা ও মন্তব্যের কিছু একুশে সংবাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
জার্মান রাজনীতিক ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেছিলেন, মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সহযোগী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।
কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে, তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- তোমরা আমারই দেয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।
সে সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হেনির কিসিঞ্জারও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।
জাপানি নাগরিক মুক্তি ফুকিউরা বাঙালি দেখলে বলতেন, তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।
বৃটিশ এমপি জেমসলামন্ড বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।
ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন, শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বলছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউণ্ডা বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শোকে পাথর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার জন্য জার্মানির একটি এয়ারপোর্টে তার পাসপোর্টটি ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখালে সেই অফিসার পাসপোর্টটি দেখেই শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ছিঃ তোমরা বাংলাদেশিরা খুব জঘন্য একটি জাতি, যেই মানুষটি তোমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাকেই তোমরা হত্যা করে ফেললে?
প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উঁচুতে ছিলো তার মাথাটি, সহজেই চোখে পড়তো তার উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশকে তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তার পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তার সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।
মরহুম মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের কবর একদিন সমাধিস্থলে রূপান্তরিত হবে এবং বাঙালির তীর্থস্থানের মতো রূপলাভ করবে।
একুশে সংবাদ/এপি
আপনার মতামত লিখুন :