দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়বহরূপ নেয় এবং প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানি করে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রথমে বলা হয়েছিল এটি সিঙ্গুপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। অবশ্য পরে জানা গেলো, সিঙ্গাপুর নয়, বাংলাদেশের আমদানি কারক বিটিআই আমদানি করে চীন থেকে এবং মধ্যস্থতাকারী একজন চীনা নাগরিক।
পরবর্তীতে বিটিআই আমদানি নিয়ে নানা কথা চালাচালি হতে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে বিটিআই মশার লার্ভা মারা যায় কিনা তা পরীক্ষার জন্য পাঠায় উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
আইইডিসিআর এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিটিআই লার্ভা নিধনে কার্যকর।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগে বিটিআই নমুনার মান যাচাইয়ের পরীক্ষা (কোয়ালিটি টেস্ট) করে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। তাতে দেখা যায়, পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনায় মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের সরবরাহ করা বিটিআইয়ের মোড়কে প্রতি মিলিগ্রামে ১ হাজার ২০০ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে গবেষণাগারে পরীক্ষায় এর চেয়ে বেশি, ১ হাজার ৪০০ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে বিটিআই প্রয়োগ নিয়ে সুপারিশ করেছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। তাতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অধীন মাঠপর্যায়ে বিটিআইয়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
আইইডিসিআরের মেডিকেল এন্টোমলজি বিভাগের গবেষণাগারে আমদানি করা বিটিআইয়ের কার্যকারিতা যাচাইয়ের পরীক্ষা করা হয়।
আইইডিসিআর বলছে, রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে সংগ্রহ করা লার্ভা দিয়ে পরীক্ষা চালায় তারা। চারবারের পরীক্ষায় তিনবারই বিটিআই প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টা পর ৯২ শতাংশ লার্ভা মারা গেছে। এক পরীক্ষায় লার্ভা মারা গেছে ৮৮ শতাংশ।
ঢাকা উত্তর সিটির জন্য আনা এসব বিটিআইয়ের নমুনা পরীক্ষা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। রোববার সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে উত্তর সিটিকে পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।
ডিএনসিসিকে এসব বিটিআই সরবরাহ করেছিল দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী চীন থেকে বিটিআই আমদানির সুযোগ ছিল না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে আমদানি করলেও এটির মোড়কে সিঙ্গাপুরের নাম দিয়েছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করার পর মশার লার্ভা নিধনে এসব বিটিআই কতটা কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখতে এর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ঠিকাদারের সরবরাহ করা বিটিআই আসলে বিটিআই কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে এর নমুনা পাঠানো হয়েছিল উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখায়।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমদানি করা বিটিআই যে অরিজিনাল (আসল) এবং শতভাগ কার্যকর, সেটি আমাদের ডিএনসিসির পরীক্ষায় নিশ্চিত করেই পরীক্ষামূলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু করেছিলাম। সোমবার উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা এবং আইইডিসিআর থেকে রিপোর্ট পেয়েছি। তাদের পরীক্ষায় নিশ্চিত হলো, কীটনাশকটি বিটিআই এবং সেটি কার্যকর।
একুশে সংবাদ/আ.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :