হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমসের সুরক্ষিত গুদাম থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনায় মামলা করেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা কাস্টমসের অফিসিয়াল নোটিশই বলছে, এসব ঘটনায় জড়িত গুদামসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোনো জবাব দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় খোদ কাস্টমসের কর্মকর্তারাই জড়িত রয়েছেন।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে ঢাকা কাস্টমসে গেলে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেন নিরাপত্তা সদস্যরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর কাস্টমস হাউজ কমিশনারের দফতরে যান সাংবাদিকরা।
চুরির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমসের উপকমিশনার মোকাদ্দেস হোসেন জানান, লকার ভাঙ্গার বিষয়টি জানতে পেরে শনিবারই কাস্টমস গোডাউন পরিদর্শন করেছেন তিনি।
মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, একটি ইনভেন্ট্রির তালিকা নেয়ার জন্য এক কর্মকর্তা এসে দেখেন যে, অফিসে যেখানে মূল্যবান পণ্য (স্বর্ণ) রাখা হয় সেই আলমারির একটি অংশ ভাঙ্গা। ওনার কাছে মনে হয়েছে, আলমারির দরজার একটি অংশ ভাঙ্গা। এরপরই তিনি এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতেই উঠে আসে গোডাউনের দায়িত্বে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়ায় তাদের বদলি করার আদেশ বাতিল করেন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান মোকাদ্দেস হোসেন।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীসহ সবাইকে জানানো হয়েছে। কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই সার্বক্ষণিক বিমানবন্দরে ছিলেন বলেও জানান তিনি। তবে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলামের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, ঘটনাস্থালের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) কাজ করে না। এঘটনার মূল নাটের গুরু সাইদুল ও সহিদুল চক্রই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, এখানে চুরির আলামত একেবারে নাই বললেই চলে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে এবং আমরা যে পরিবেশ দেখেছি তাতে বাইরে থেকে কোনো লোক এসে এ স্বর্ণ নেয়া বা কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া এ আলমারি ভাঙ্গা সম্ভব হয়। কাস্টমস অফিসেই কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যেগুলো তাদের নিজেদের। সেগুলো দিয়েই আলমারি ভাঙ্গা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
আপাতত এ ঘটনায় চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সন্দেহজনক আরও অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এর আগে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজির বেশি স্বর্ণ চুরির ঘটনা ঘঘটে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। মূলত এসব স্বর্ণ যাত্রীদের থেকে জব্দ করার পর কাস্টম হাউজের গুদামে রাখা হয়েছিল।
একুশে সংবাদ/স.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :