ঢাকার বিমান বন্দর কাস্টমস হউজের গুদাম থেকে ৫ কেজি স্বর্ণ আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে চুরির নাটক মঞ্চস্থ করা হয় বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
দায়িত্বরত কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরে স্বর্ণের বার সরিয়েছেন। অডিট শুরু হওয়ার কারণে চুরির নাটক সাজানো হয়েছিল।
এর আগে ২০১৯ সালে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ থেকেও একই কায়দায় প্রায় বিশ কেজি স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার গায়েব করা হয়। পরে অডিটের আগ মুহূর্তে চুরির নাটক সাজিয়ে তা প্রচার করা হয়েছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তারা বিমানবন্দর কাস্টমস হাউজ থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ উধাওয়ের ঘটনায় চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার জন সিপাহীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভ্রান্তিকর ও এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ২০ আগস্ট প্রথম ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েবের বিষয়টি জানতে পারেন। সেসময় ছয়টি চালানের মাধ্যমে জমা হওয়া স্বর্ণের বারের মধ্যে ৯০টির হদিস পাওয়া যায়নি।
কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও কাস্টমস কর্মকর্তারা তা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পর একে একে বেরিয়ে আসে একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ সরানোর ঘটনা।
সম্প্রতি ভল্টে রাখা স্বর্ণ যাচাই-বাছাইয়ের হওয়ার কথা ছিল। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কী পরিমাণ স্বর্ণ চুরি হয়েছে তা দেখতে গিয়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার হিসাব বেরিয়ে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে স্বর্ণ লুটের সঙ্গে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চুরি হওয়ার সময় সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া বিমানবন্দর কেপিআইভুক্ত এলাকা।
গোটা এলাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে।
এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরি হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কাস্টমসের লোকজন জড়িত না থাকলে কোনোভাবেই ভল্ট থেকে স্বর্ণ বের করে আনার সুযোগ নেই।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে জব্দ হওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণের বার জমা দেওয়ার সময় একটি অংশ সরিয়ে ফেলা হতো। এভাবে দিনের পর দিন সুযোগ বুঝে চক্রের সদস্যরা স্বর্ণ গায়েব করে দেয়। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ বা স্বর্ণের বার জব্দ করার পর দ্রুত তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখিয়ে ২০২০ সাল থেকে জব্দ হওয়া স্বর্ণ ও স্বর্ণের বার কাস্টমস হাউজের ভল্টে রেখে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেনাপোল কাস্টমস হাউজ থেকে ২০ কেজি স্বর্ণ চুরির নাটকটিও সাজানো হয়েছিল সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির সময়। বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউজ থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব হওয়ার ঘটনাটিও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এবং সাজানো।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :