সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট জনবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ইনটেলেকচুয়াল হিস্ট্রি অন স্টার্ট-আপ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট কী তা না বুঝেই বিএনপি শুধু শুধু সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে।এর পেছনে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
পলক বলেন, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যারা আইনটি নিয়ে এ সাইবার সিকিউরটি অ্যাক্ট নিয়ে সমালোচনা করছেন তারা বিষয়টি না জেনেই করছেন। তবে সমালোচনার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাইবার সিকিউরিটি আইনটি বিশ্লেষণ করে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট জনবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। এ আইনে গণমাধ্যম বা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা খর্ব নয় বরং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পলক বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আইনটি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের আইন এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ আইনটি করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইনটি যুগোপযোগী এবং ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেন্টর, কোচ, ট্রেইনার ও অন্যান্যরা শুধু হাতে কলমে শিখাবেনই না যে কীভাবে একটি স্টার্ট-আপ তৈরি বা গড়ে করতে হয় বরং পুরো স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাড (ওয়েব অ্যাপলিকেশন) প্রত্যেকের জন্য টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করবে। জয় সিলিকন টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহীতে স্থাপিত স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাডটি বিনামূল্যে কোচিং, মেন্টরিং ও স্টার্ট-আপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য কো-ওয়ার্কিং স্পেস ও বরাদ্দ দেবে।
এদিকে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ডিজিটাল অন্ট্রাপ্রেনারশিপ (শিল্পোদ্যোগ) অ্যান্ড ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় স্টুডেন্ট টু স্টার্ট-আপ ভেঞ্চারস লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত মাইক্রো কোর্স অন ইনটেলেকচুয়াল হিস্ট্রি অন স্টার্ট-আপ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার রাজশাহীতে শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বক্তব্যের পর এ কর্মশালার সমাপনী ঘোষণা করেন পলক। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহীর জয় সিলিকন টাওয়ারে `ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান সিড` উদ্যোগের আওতাধীন স্টার্ট-আপ স্টুডিও `স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাড` এর উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
ভবিষ্যৎ স্টার্ট-আপ তৈরি লক্ষ্যে আয়োজিত এ কোর্সে রাজশাহী জেলার আওতাধীন পাঁচটি ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২৩৯ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিল বলে জানিয়েছেন স্টুডেন্ট টু স্টার্ট-আপ ভেঞ্চারস লিমিটেডের সিইও আশিকুর রহমান রুপক।
যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে সেগুলো হলো- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কলেজ, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৩টি সেশন পরিচালিত হচ্ছে আশিকুর রহমান রুপকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে।
আশিকুর রহমান রুপক জানান, একটি কন্সেপ্ট ও কালচার হিসেবে `স্টার্ট-আপ` এর ইতিহাস, বিবর্তন ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণার পাশাপাশি কেন এবং কীভাবে একটি স্টার্ট-আপ গড়ে তুলতে হয় তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করাই এ মাইক্রো-কোর্সটির মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাডের আওতায় ছয় মাসব্যাপী কো-অন্ট্রাপ্রেনরশিপ প্রোগ্রাম আয়োজন করা হবে, যার লক্ষ্য নতুন নতুন স্টার্ট-আপ তৈরি এবং বাজারে লঞ্চ করা। রাজশাহী জেলার অন্তর্গত যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণী যাদের কোনো অ্যাকাডেমিক প্রোজেক্ট, থিসিস, রিসার্চ বা বিজনেস আইডিয়া আছে যেগুলোকে বাস্তবে একটি বিজনেস ভেঞ্চার হিসেবে গড়ে তুলতে চান তারা এ লঞ্চপ্যাড থেকে সুবিধা পাবেন। এমনকি রাজশাহী জেলার অন্তর্গত যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণী যাদের ওপরের কোনোটিই নেই কিন্তু সে ব্যক্তি হিসেবে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে অর্থাৎ কোনো স্টার্ট-আপের ফাউন্ডার বা কো-ফাউন্ডার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তার জন্য এ লাঞ্চ প্যাড হবে নিজেকে গড়ে তোলার আদর্শ জায়গা।
অক্টোবর ২০২৩-২০২৪ সেশনের ব্যাচে ভর্তিচ্ছু প্রায় ২৫১ জন তরুণ-তরুণী, উদ্যোক্তা ও স্টার্ট-আপ ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর আগে গত ২৭ আগস্ট চুয়েটে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাডের উদ্বোধন করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারে একটি করে লঞ্চপ্যাড স্থাপন করা হবে এবং একেকটি স্মার্ট বাংলাদেশ লঞ্চপ্যাড বছরে ৫০টি করে নতুন স্টার্ট-আপ তৈরি করে বাজারে লঞ্চ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক এ কে এ এম ফজলুল হক, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবুল ফাত্তাহ মো. বালিগুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক রাজশাহী প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুল কবির।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :