জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর বাংলাদেশের অত্যাধিক নির্ভরতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা কমিয়েছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়িয়েছে পরিবেশ দূষণ। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এবং জলবায়ু রক্ষায় বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি খাতে আশার আলো হতে পারে সৌরবিদ্যুৎ।
সোমবার (২ অক্টোবর) প্রকাশিত গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গের (বিএনইএফ) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌর প্রযুক্তি সুলভ হওয়ার কারণে ২০২৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যুতের সবচেয়ে সস্তা উৎস হয়ে উঠবে সৌরবিদ্যুৎ। এ ছাড়া এই দশকের শেষ নাগাদ সৌর প্লাস ব্যাটারি, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সস্তা হবে।
এতে কার্বন নিঃসরণের কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ দেশের ৯৭ শতাংশ বিদ্যুৎই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হয়। কিন্তু বিপরীতে বাংলাদেশ এখনও আরও কয়লা এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। সেই সঙ্গে নির্গমন কমাতে অপেক্ষাকৃত ক্লিনার গ্যাসের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বরাতে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। যার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ও ৩২ শতাংশ আসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
আগে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ মজুত দিয়ে চালানো হতে। কিন্তু বর্তমানে তা কমে আসায় বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ওপর নির্ভর হচ্ছে।
এদিকে গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে গ্যাসের দাম। এক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশি জ্বালানি খাত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এতে সারা দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি একটি বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যায়।
একদিকে করোনা অতিমারির প্রভাব, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি বিল। এই দুই কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে ব্লুমবার্গএনইএফ।
বিএনইএফ বিশ্লেষক ইশু কিকুমা বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা না বাড়িয়ে, বরং আরও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি খরচ এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারে বাংলাদেশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর হলে আরও সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
অথচ নিঃসরণ কমানোর জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে কয়লার সঙ্গে অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজনের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস মিশ্রিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা দিকে এগোছে। কিন্তু বিএনইএফের মতে, উভয় প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে। যেখানে সৌরবিদ্যুতের মতো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সত্যিকার অর্থেই দিন দিন সাশ্রয়ী হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :