বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা বিশাল। মাছের খনি হিসাবে পরিচিত বঙ্গোপসাগর এলাকায় বারোমাসই মৎস্য আহরণ করে থাকেন জেলেরা। ইঞ্চিন চালিত ট্রলার বা নৌকাযোগে মাছ ধরতে গিয়ে সাগরে নানা দুর্ঘটনা স্বীকার হন জেলেরা। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ জেলে রয়েছে।
উত্তাল সাগরে নৌকা বিকল হয়ে বা ডুবে গিয়ে এবং জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়ে অনেক জেলে অকালে প্রাণ হারান। অথচ তারা মাছের উপর নির্ভরশীল। মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩৯০ লক্ষ বাণিজ্যিক এবং জীবিকা নির্বাহকারী জেলে এবং মাছ চাষি রয়েছে।
কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈরী আবহাওয়া এবং জলদস্যুদের আক্রমণে উপকূল ও সামুদ্রিক জলসীমায় প্রতি বছর গড়ে ১৩৫০ জেলে প্রাণ হারান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বলছে, সমুদ্রগামী বাংলাদেশি ফিশিং বোট ও ট্রলারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম সংক্রান্ত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে, উপকূলীয় ও সমুদ্রসীমায় এখতিয়ারভুক্ত সব সমুদ্রগামী বাংলাদেশি ফিশিং বোট, ট্রলার ট্র্যাকিং ও মনিটরিংয়ের বোট ও ট্রলারের রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স প্রদানকালে জিপিএস, এইচএফ, ভিএইচএফ, এআইএস (অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম), জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন) সেট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
কোস্টগার্ডের তরফে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময় উপকূলীয় বা সমুদ্রগামী বাংলাদেশি ফিশিং বোট ও ট্রলার প্রতিকূল আবহাওয়ায় পথ হারায়। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে। যে কারণে সমুদ্রে দস্যুতাসহ অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট বা হেলিকপ্টার কেনা হলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন দুর্ঘটনা কবলিত বোটগুলো তাৎক্ষণিক খুঁজে বের করে উদ্ধার করা সহজ হবে।
বাণিজ্যিক, যান্ত্রিক ও আর্টিশনাল ফিশিং ভেসেল মনিটরিং ও ট্যাকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে এবং জেলেদের নিরাপত্তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি)’ নামে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৯ সাল থেকে প্রকেল্পর আওতায় কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ব্র্যান্ডউইথ ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি ফিশিং ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিত্বে জয়েন্ট মনিটরিং সেন্টার (জেএমসি) স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রামে।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :