স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি বড় পদক্ষেপ উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই পরমাণু শক্তিকে শান্তিপূর্ণ পথে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে রূপপুরে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের দিন আজ। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে সামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।
এর আগে রূপপুরে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত আছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা। এ জন্য প্রকল্প এলাকার অফিস সংলগ্ন খোলা মাঠে বিশাল প্যান্ডেল বানানো হয়েছে। যেখানে বসে ভার্চুয়াল বক্তব্য শোনা এবং দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই প্রকল্পের পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পে নেয়া হয় ইউরেনিয়াম।
বুধবার (৪ অক্টোবর) পাবনার রূপপুর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২০২৫ সালের শুরুতে রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এ সময় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি প্রকল্প এলাকায় আসার পরই এটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ অর্জন দেশবাসীর।
এদিকে, ইউরেনিয়াম হস্তান্তর নিয়ে প্রকল্পের আবাসিক এলাকা ‘গ্রিন সিটি’র সীমানা প্রাচীরে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। এতে বাংলাদেশি ও রুশ বন্ধুত্বের বদলে যাওয়া এক জনপদের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শোভা পাচ্ছে দেশি সংস্কৃতি, বাংলাদেশ-রাশিয়ার সম্পর্ক এবং বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয়। আছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, রূপপুর প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ভালোবাসার রূপপুর, ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্জনসহ নানা অঙ্কন। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের ফুল, পাখি, সূর্য ও আবহমান বাংলার নানা সংস্কৃতি। প্রকল্প এলাকা সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ-রাশিয়ার পতাকা ও বিভিন্ন ফেস্টুন ব্যানারে। সব মিলিয়ে রূপপুর জুড়ে এখন সাজ সাজ রব।
উল্লেখ্য, ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুটি ইউনিটের কাজ চলছে। প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও ঠিকাদার রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। প্রকল্পটিতে দুটি ইউনিট স্থাপিত হবে, প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। প্রতিটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম।
একুশে সংবাদ/চ.ট.স.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :