বন্দর নগরী চট্টগ্রামে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল পথ। লম্বা এই পথ পারি অতিক্রমে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। অথচ যানজট ঠেলে এই পথ পেরুতে ব্যয় হতো দেড় থেকে দুই ঘন্টা। কোন কোন সময় তারচেয়ে বেশি সময় রাস্তায় কাটাতে হতো। যানজটে কবলে পড়ে নষ্ট হতো কর্মঘন্ট।
উড়াল পথ বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে গিয়ে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের পরপরই এই উড়াল পথ চালু হবে। চট্টগ্রামের একাধিক মেগাপ্রকল্পের একটি এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এতে করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য ও নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে কমবে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট, বাড়বে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। বন্দর নগরীর বুক চিরে ছয় বছর ধরে চলা বিশাল কর্মযজ্ঞ একেবারেই শেষের দিকে। বহুতল ভবনগুলো ছাড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের সক্ষমতা ও উন্নয়নের পালকে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি মেগাপ্রকল্প। যেটি আমূল বদলে দেবে নগরীর অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এক্সপ্রেসওয়ের ওপরের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। উদ্বোধনী হুইসেল বাজলেই যানচলাচল শুরু হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এর উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথা জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
তিনি বলেন, যেহেতু টানেলটা উদ্বোধন হচ্ছে, এটি উদ্বোধনের সাথে সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজন শহরের মধ্যে আসার চেষ্টা করবে। ফলে নগরীতে একটা চাপ তৈরি হবে। আর এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের চালু হলে তার পুরো সুবিধাটা কিন্তু জনগণ পাবে।
চট্টগ্রাম নগরী ঘিরে রিং রোড চালুর পর আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হবে বঙ্গবন্ধু টানেল। এর পরপরই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
স্থানীয়রা বলেন, উড়ালসড়কটি চালু হলে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আমরা ২০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবো। এই উড়াল সড়কের ফলে যানজট অনেক কমে যাবে।
৩৯০টি পিলার ও ৪০০টি গার্ডারের ওপর ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ের মূল যে সড়ক সেটার কাজ হয়তো এই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে তবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টকে সংযুক্তকারী ১৪টি র্যাম্প নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত এর পুরোপুরি সুফল মিলবে না।
‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয় ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি এর কাজ শুরু হয়। যদিও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলে তিন বছরের মধ্যে। ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :