ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কিন্ত এখানে (ফিলিস্তিনে) প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঘন হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ আমরা চাই না। খাদ্য-পানিসহ ফিলিস্তিনির মানুষের জন্য সেবা খাত খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি।
এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলায় জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব তোলেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রস্তাবটি সংসদে তোলা হলে তা সর্ব সম্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়। সেটা আমরা চাই। কিš ফিলিস্তিনে অনবরত মানবাধিকার লঘন হচ্ছে। নারী ও শিশু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্যালেস্টাইনের জনগণ অমানবিক জীবনযাপন করছে। সেখানে হাসপাতালকে নিরাপদ মনে করে মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেই ইসরায়েলি বাহিনী এয়ার অ্যাটাক করে। বোম্বিং করে। নারী-শিশুকে হত্যা করে। একটা জঘণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নিন্দার ভাষা নেই। হাসপাতালের মতো জায়গায় তারা কী করে হামলা করতে পারলো? মানুষ হত্যা করতে পারলো?’
অতীতের হামলার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আগেও কিš এভাবে হত্যাকাÐ চালিয়েছে। নারী-শিশু, অন্তঃসত্ত¡া নারী হত্যা করেছে। শিশুরা বড় হলে নাকি যোদ্ধা হয়ে যায়, তাই তাদের হত্যা। আমি যখন যে ফোরামে গিয়েছি এসব হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানয়েছি। এই ধরনের ঘটনা আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করা একজন মানুষ হিসেবে, মা হিসেবে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে ওষুধ, খাদ্য ও নারী-শিশুদের জন্য পণ্য সামগ্রী পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটা সেটা ওখানে পৌঁছানোর সুযোগ নেই। আমরা মিশরে পাঠিয়েছি। তারা গ্রহণ করেছে। সেখান থেকে পৌঁছে দেবে। সব থেকে দুর্ভাগ্য যে— সেখানে খাবার ওষুধ, কোন কিছুই দিতে দিচ্ছে না। চারদিকে ইসরায়েলি বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে। এটা কোন ধরনের কথা! যেকোন যুদ্ধে নারী শিশু ও হাসপাতালের ওপর এভাবে হামলা হয় না। খাবার বন্ধ হয় না। কিন্তু আজকে সেখানে খাবার-পানি সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষ হাহাকার করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকতে। জাতিসংঘ থেকে যখন যে চেষ্টা হয় এবং কোথাও মানবাধিকার লঘন ও হত্যাকান্ড হলে তার নিন্দা জানাই। এটাই আমাদের নীতি। আরব লীগের সঙ্গে আমরা স্পন্সর হয়ে জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে ১২০টি দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আমরা চাই, অন্তত সেবা খাত খোলা হোক। যাতে করে ওখানকার মানুষগুলো বাঁচতে পারে। সেই সেবা খাতটা বন্ধ করে কষ্ট দিচ্ছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যা ঘটাচ্ছে, তা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।
ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কীভাবে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। ব্রাসেলস সফরে গিয়ে আমার ভাষণে এই বিষয়টি তুলেছি। সেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে আমি বলেছি, আপনারা আর যাই করেন যুদ্ধ বন্ধ করেন। যুদ্ধ মানুষের মঙ্গল আনে না। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। নারী-শিশুদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। অস্ত্র প্রতিযোগিতার টাকা শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় ব্যয় করেন। তাহলে বিশ্বের মানুষের কষ্ট থাকবে না। সভায় আমার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কিন্ত এখানে প্রতিনিয়ত মানবাধকার লঘন হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিন একটা বড় দেশ ছিল, ধীরে ধীরে তা দখল করতে করতে এখন ক্ষুদ্র একটি অংশ তাদের। তারপরও একটি প্র¯াব ছিল টু স্টেট ফর্মুলা। এটাও তারা মানছে না। আমাদের কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়। আমরা যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সেখানে সেবা খাত খুলে দেওয়ার জন্য বলেছি। কারণে সেখানে নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :