প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়ান আরাফিকে বিএনপির কার্যালয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অন্যের রুপ ধারণ করে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে করা পল্টন থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়ান আরাফিকে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সঙ্গে করে নিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানায়। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীর বিক্রম, এসবিপি, এনডিসি, পিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের সাবেক কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ড (এআরটিডিওসি) এর জিওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
একটি পদাতিক ইউনিট, রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও পদাতিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পদাতিক ডিভিশনসহ সেনাসদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বাংলাদেশ রাইফেলসের পরিচালক অপারেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্টেনিং এবং ননকমিশন অফিসার্স একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সেনানিবাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। তার বিভিন্ন আচরণ সেনাবাহিনীর জন্য ‘বিব্রতকর’ বলেও পরের বছর এক বিজ্ঞপ্তি দেয় আইএসপিআর।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সেনানিবাসে প্রবেশ এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যাচার করছেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর রবিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গত বছরের ১০ এপ্রিল সেনানিবাস ও সেনানিবাস আওতাভুক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার ফলে তার জন্য সেনানিবাস ও সেনানিবাসের আওতাভুক্ত সব স্থাপনা এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
আইএসপিআর জানায়, তিনি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেওয়া হয়।
আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তিনি এলপিআরে থাকাকালে সারওয়ার্দী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর সেনা আইনবহির্ভূত মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন।কিন্তু বিয়ের আগেই ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর থেকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন। এমনকি বিয়ের আগেই তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পহেলা বৈশাখ উদযাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়িতে অবকাশ যাপন করেছেন। এছাড়া তারা বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ ও অবস্থান করেছেন। সামরিক ও অসামরিক পরিমণ্ডলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এছাড়া সারওয়ার্দী যাকে বিয়ে করেছেন তিনিও একজন বিতর্কিত নারী হিসেবে পরিচিত।
আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীলে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর (সম্প্রতি বিএ-২০০৪) এমন আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য অস্বস্তি ও বিব্রতকর। এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসার এবং অন্যসব পদের মধ্যে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে ও বিরূপ প্রভাব ফেলে। সামগ্রিক বিবেচনায় গত বছরের ১০ এপ্রিল তাকে সেনানিবাস ও সেনানিবাস আওতাভুক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :