দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নারী সমাজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ৩১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে নির্বাচনে সব নাগরিকের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং ভয়ভীতিমুক্ত উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে বিএনপিএসের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর বাবর রোডের বিএনপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপিএসের পরিচালক শাহনাজ সুমী।
স্বাগত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপে বসলেও দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজকে আলোচনার আহ্বান জানায়নি। যদিও নারী সমাজের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিক স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত সেবকদের নির্বাচিত করতে পারবে। যাদের দ্বারা গণতন্ত্র সুসংহত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ৯ দফা প্রস্তাবনায় বলা হয়, নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারী, দরিদ্র ও জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ধর্মীয় উগ্রবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে এমন এলাকায় বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ১২টি প্রস্তাবনা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। সেখানে উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিশ্চিত, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তন, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নারীর প্রতি আয়বৈষম্য কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকে জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গণমাধ্যমের জন্য তুলে ধরা চারটি প্রস্তাবনায় বলা হয়, নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকাল ও নির্বাচনপরবর্তী সময়ে কোথাও কোনো দল বা প্রার্থী বা তার সমর্থকেরা নারী, সংখ্যালঘু ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা চাপ প্রয়োগের ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উসকে দিয়ে কোনো প্রার্থীর বিপক্ষে প্রচারণা চালানো হলে বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করা হলে এবং নারী অধিকার ও সংবিধানবিরোধী কোনো বক্তব্য রাখলে তথ্য-প্রমাণসহ তা প্রচার করতে হবে। নির্বাচন বিষয়ক সব প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট নারী ও পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যাচিত্র তুলে ধরতে হবে।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রতি ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ভোটারদের ‘ভোটার এডুকেশন’-এর ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো রকম আর্থিক লেনদেন বা ভয়ভীতি দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সচেতনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। সংবিধান এবং নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার বিরোধী, নারী নির্যাতনকারী, ঋণখেলাপি, করখেলাপি, সন্ত্রাসী বাহিনীর গডফাদার ও যুদ্ধাপরাধীকে নিজেদের মূলবান ভোট প্রদান না করা এবং প্রার্থী হিসেবে এদের বর্জনের ব্যাপারে অন্যদের উৎসাহিত করতে হবে।
একুশে সংবাদ/ক.ক/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :