রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে কুড়িয়ে পাওয়া সাত লাখ টাকা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিলেন আব্দুল কাইয়ুম নামে এক পাম্প অপারেটের। আগেও এমন কুড়িয়ে পাওয়া টাকা মালিককে ফেরত দেয়ার নজির রয়েছে তার। পুলিশের মধ্যস্থতায় হারানো টাকা ফেরত পেয়ে আপ্লুত মালিক।
পুলিশ বলছে, ভবিষ্যতের জন্য এ ঘটনা একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে এভাবে মোটরসাইকেলের পেছনে টাকা বহন না করার পরামর্শ তাদের।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ওই ব্যক্তি হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী প্রান্তের টোল প্লাজা অতিক্রম করেন। এরপর হঠাৎ তার মনে হয় পেছনে থাকা ব্যাগটি নেই। মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে তিনি যেদিক থেকে আসছিলেন আবারও সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে টোল প্লাজার দায়িত্বে থাকা লোকজন তাকে বাধা দেন। কারণ এভাবে যাওয়ার নিয়ম নেই।
মোটরসাইকেল আরোহী সেদিন বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে তার দোকান থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল সাত লাখ টাকা। সেই টাকা তিনি একটি ব্যাগে মোটরসাইকেলের পেছনে রেখেছিলেন। টাকার ব্যাগ খুঁজে না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
এদিকে, ওই একই ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী থানার ওপরের অংশে টাকাসহ ব্যাগটি সেদিনই কুড়িয়ে পান কাইয়ুম নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহী। তিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন পাম্প অপারেটর। টাকার ব্যাগ পাওয়ার পর তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেন। তিনি টোল প্লাজার দায়িত্বে থাকা লোকজনের কাছে গিয়ে জানতে চান, কোনো কিছু হারানোর বিষয়ে তারা অবগত কিনা? তারা জানান, একজনের সাত লাখ টাকা হারানোর অভিযোগ আছে। ব্যাস, আর যায় কোথায়! মিলে যায় হিসাব।
কাইয়ুম বলেন, টাকাটা পাওয়ার পর অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করি যে, কী করা যায়! অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, পুলিশ ছাড়া এতগুলো টাকা দেয়া উচিত হবে না। কারণ টাকাটা ফেরত দেয়ার পর যদি অন্য কেউ এসে দাবি করে, তখন তো বিপদ হবে। তাই পুলিশ বিষয়টি সমাধান করলে দায়বদ্ধতা তাদের ওপর থাকবে। তাই টাকাটা কুড়িয়ে পাওয়ার পরদিন বুধবার (২৯ নভেম্বর) ডিএমপিতে গিয়ে টাকাটা জমা দিই।
তিনি আরও বলেন, ‘এতগুলো টাকা হারিয়ে একটা লোক বিপদগ্রস্ত হতে পারে। আমার ১০ হাজার হারালে তো আমি ঘুমাতেই পারতাম না! বিষয়টি চিন্তা করেছি। এছাড়া আমি আরও ভেবেছি যে, এ টাকাটা খাওয়া আমার জন্য ঠিক হবে না।’
কাইয়ুম পরিচিতদের সঙ্গে পরামর্শ করে কুড়িয়ে পাওয়া টাকা নিয়ে হাজির হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরে। সব শোনার পর টাকা হারিয়ে যাওয়ার সাধারণ ডায়েরির সঙ্গে মিলিয়ে ডাকা হয় প্রকৃত মালিককে। পরে তার হাতে তুলে দেয়া হয় টাকাগুলো।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতারণা, চুরি, ডাকাতির ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিকারের মানুষ হয়ে যেন উঠতে পারে, সেটাই চাওয়া। সবার মধ্যে যেন কারও টাকা মেরে না খাওয়ার মানসিকতার বিকাশ ঘটে।’
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :