গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে নিহত হয় একজন, আহত হয় অর্ধশতাধিক। তদন্তে বেরিয়ে আসে গ্যাসকাটার দিয়ে প্রায় ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
একই দিন নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ৭০টি ফিশপ্লেট ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়লে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় সীমান্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা।
পুলিশের তথ্য বলছে, গত ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে রেলে এমন ২৭টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এরপর নিরাপত্তা ইস্যুতে নড়েচড়ে বসেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলপথ ও ট্রেনে নাশকতা রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে-একসঙ্গে একাধিক ট্রেন চালানো, ট্রেনের আগে মোটর ট্রলি বা পাইলট ইঞ্জিন রাখা। এছাড়া রাত্রিকালীন ট্রেনের গতিও কমানো হয়েছে। তবে এরপরও তিন হাজার কিলোমিটারের রেলপথ ঝুঁকিমুক্ত রাখা কঠিন বলে মনে করছে রেলওয়ে।
রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলছেন, ‘রাত্রিকালীন ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে দিয়েছি, দিচ্ছি। যাতে করে যদি দুর্ঘটনা ঘটেও যায়, তাহলে যেন জান–মালের ক্ষতি কম হয়। এছাড়া যে সমস্ত রুটে অনেক রাতে একটা বা দুইটা ট্রেন চলে, কিন্তু যাত্রী কম হয় আমরা সেসব ট্রেন হয়ত এখন বন্ধ রাখব।’
রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ট্রেনে আগুন, পেট্রল বোমা নিক্ষেপ, রেললাইন কাটা ও ফিশপ্লেট খুলে ফেলার ঘটনায় অসংখ্য মামলা হয়েছে। দেড় মাসে কেবল ঢাকাতেই মামলা হয়েছে ১৫টি। আটক করা হয়েছে ৭০ জনকে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহম্মেদ বিশ্বাস বলেন, এ সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত এরই মধ্যে এমন ৭০ থেকে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রেলের দুর্ঘটনা ও নাশকতার ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান। তিনি বলছেন, ‘রেললাইনের আশপাশে যাদের বাড়িঘর আছে তারাও যদি একটু সচেতন হয় যে, রেললাইনের ওপর দিয়ে যেন কেউ হাঁটাচলা না করে। এছাড়া কাউকে যদি সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করতে দেখে, তাহলে যেন নিকটস্থ রেলস্টেশন বা পুলিশে খবর দেয়। তাহলে অনেক দুর্ঘটনা আমরা এড়াতে পারব। এটা সবার জন্যই সহায়ক হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু জনবল দিয়ে রেলপথ ও ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল করাই একমাত্র সমাধান।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :