রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ দুই ব্যক্তিকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসেছেন তাদের স্বজনরা। নাশকতার এই ঘটনায় চারজন নিহত হন। এদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা গেলেও দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর মধ্যে নিখোঁজ খোকন মিয়াকে (৩৪) খুঁজতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মর্গে আসেন তার স্ত্রী সাজন এবং নিখোঁজ রশীদ ঢালীর (৬০) খোঁজে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসেন তার ভাতিজা বেলাল আহমেদ।
স্বামীর পুড়ে যাওয়া মরদেহের পাঞ্জাবি ও শরীর দেখে সাজন অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন মর্গে থাকা দুই অজ্ঞাত মরদেহের একটি তার স্বামী খোকন মিয়ার। অন্যদিকে, চেহারা এবং পরিধেয় কাপড় দেখে বেলাল আহমেদ নিশ্চিত করেছেন আরেকটি মরদেহ তার চাচা রশীদ ঢালীর।
নিখোঁজ খোকনের স্ত্রী সাজন বলেন, ‘ভাতিজির বিয়ের জন্য বৃহস্পতিবার তিনি (খোকন) গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে যান। গতকাল রাতে ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গত রাত ৯ টায় সবশেষ তার সাথে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। পরে জানতে পারলাম ট্রেনে আগুন লেগে চারজন মারা গেছে। কিন্তু আমি আমার স্বামীর মোবাইলে অনেকবার ফোন দিয়েছি তার মোবাইলে কল ঢুকছে না।’
সাজন আরও বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে দুইটি মরদেহ দেখি। এর মধ্যে একটি মরদেহ পাঞ্জাবী পরা ও মুখমন্ডল দেখে আমার স্বামীকে চিনতে পেরেছি। আমার স্বামী সব সময় পাঞ্জাবি পরতেন। তবে এখানে স্যাররা বলেছেন ডিএনএ টেস্টে ম্যাচিং না হলে আমাদের মরদেহ দিবে না। আগামীকাল সকাল দশটায় আসতে বলেছে।’
সাজন জানান, তিনি ও তার স্বামী খোকন ক্রোনি গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্সটাইলে কাজ করেন। খোকন কারখানাটিতে টেক্সটাইলের অ্যাসিস্ট্যান্ট অপারেটর হিসেবে কর্মরত। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তারা নারায়ণগঞ্জের বিসিক এলাকায় থাকেন।
অপরদিকে বেলাল হোসেন জানান, তাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরে। তার চাচা রশিদ ঢালী নেত্রকোনা বড় বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন।
বেলাল বলেন, ‘গতকাল রাতে নেত্রকোনা থেকে পাইকারি কাপড় কেনার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তিনি বাসায় বলেছিলেন তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন। আমরা টিভিতে খবর দেখে তার মোবাইলে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু মোবাইলে তার কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারি দুইটি অজ্ঞাত মরদেহ নাকি ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। এখানে এসে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে এটাই আমার চাচা।’
সাজনের মতো তাকেও বুধবার সকাল ১০টায় আবারও হাসপাতালে আসতে বলা হয়েছে। এরপর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে রশীদ ঢালির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে দুর্বৃত্তের আগুনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়। যাত্রীরা বলছেন, ভোরে ট্রেনটি নেত্রকোণা থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছালে নাশকতার উদ্দেশে তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে রেল লাইনের ২০ ফুট কেটে ফেলায় দুর্ঘটনায় পড়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাত বগি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে এক জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশতাধিক যাত্রী।
একশে সংবাদ/জ.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :