মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকামুখো মোহনঞ্জ এক্সপ্রেসে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মা-শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। পুড়ে যায় তিনটি বগি। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ঘটনা উঘাটনে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত দুইশ’ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে আগুনের সূত্রপাত ক্যান্টমেন্ট স্টেশন পেরিয়ে সৈনিক ক্লাবের আগে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে গোয়েন্দারা দেখছেন, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তেজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটি পৌঁছাতে সময় লাগে ১৮ মিনিট। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিতে আগুন দেখা যায়নি।
কিন্তু তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার আগে টের পাওয়া যায় ট্রেনে আগুন লেগেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাবের আগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম সবুর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে শনাক্ত করা যায়নি, চেষ্টা চলছে।
গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, আগুন কোন এলাকায় লাগানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো আগুন বা ধোঁয়ার আলামত পাইনি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে আগুনের আলামত স্পষ্ট দেখা গেছে।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয় ট্রেনটিতে।
কারণ সৈনিক ক্লাবের আগের কোনো সিসিটিভিতে আমরা ট্রেনটিতে আগুন কিংবা ধোঁয়ার আলামত দেখতে পাইনি। এ ছাড়া, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, বিমানবন্দরে দু’জন নেমে যাওয়ার পরপরই আগুন দেখা যায়। এটি আসলে সঠিক নয়।
কারণ, বিমানবন্দর থেকে মহাখালী বা তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার দূরত্ব ১৮ মিনিট। আগুন ১৮ মিনিট আগে লাগলে পুরো ট্রেন পুড়ে ছাই হয়ে যেত।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আগে ট্রেনটির যাত্রাবিরতির স্টেশন ছিল গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ জংশনে। টঙ্গীতেও ট্রেনটি থামেনি। আর বাইরে থেকে দেখার সুযোগও নেই যে কেউ আগুন লাগাচ্ছে কি না।
আমাদের ধারণা স্পষ্ট, আগুন বিমানবন্দর স্টেশনে দেওয়া হয়নি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পর আগুন দেওয়া হয়। আমরা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মাস্টার, লাইনম্যান, সিগন্যালম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা ক্লিয়ার পাস দিয়েছেন। তারাও তখন আগুন দেখেননি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দৃশ্যমান হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট যে, এটি নাশকতামূলক কাজ। আমরা সম্ভাব্য চার স্টেশন নিয়ে কাজ করছি। গফরগাঁও, এয়ারপোর্ট, ক্যান্টনমেন্ট ও তেজগাঁও স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে আমরা শনাক্ত করতে পারিনি।
মঙ্গলবার ভোর ৫টায় ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মা ও শিশুসন্তানসহ ৪ যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছে, নাদিয়া আক্তার পপি (৩৫) ও তার শিশুসন্তান ইয়াসিন (৩)।
এদিন রাতে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) খালেদ মোশাররফ বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও আগুনে পুড়ে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইন ও চারজনকে হত্যার পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। তবে মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় আসামি অজ্ঞাত।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :