নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, এবারের ভোট (নির্বাচন) শুধু আমরা ভালো বললেই হবে না। বহির্বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদেরকেও বলতে হবে একটি ভালো ভোট হয়েছে। ভোট ভালো না হলে ভবিষ্যৎও খুব একটা ভালো হবে না।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভালো ভোট যদি আপনারা না করেন তাহলে আপনি হয়ত এমপি হবেন, সরকার গঠন করতে পারেন। কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে কিছু করতে পারবেন না। কেননা বহির্বিশ্ব যদি আমাদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে তাহলে আমরা কিন্তু কেউ সুখে থাকব না।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আনিছুর রহমান বলেন, আমরা এবারই প্রথম নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার দিচ্ছি। এটারও নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আমরা যদি আগের মতো সেই অবস্থানে থাকতাম তাহলে এ কাজটি করতাম না। দুর্গম এলাকা বাদে সকাল ৮টার আগে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। এতদিন আমরা বলে আসছি, কিন্তু এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলতে যা বুঝায় সেটি করতে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ সকল বাহিনী মাঠে থাকবে। সব জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেটও তাদের সঙ্গে থাকবেন। পুলিশের পাশাপাশি এবার আনসার ব্যাটালিয়নও থাকবে। সবমিলিয়ে সারা দেশে ৭ লক্ষাধিক ফোর্স ভোটের মাঠে কাজ করবে।
আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দিব। ভোটার আনার দায়িত্ব কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার না। সেই দায়িত্ব প্রার্থীদের। প্রার্থী নিজে, তার কর্মী-সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন। ভোটার যত বেশি আসবে নির্বাচন তত অংশগ্রহণমূলক হবে।
নির্বাচন কমিশনের ওপর বহির্বিশ্বের চাপ নেই উল্লেখ করে ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ভোট সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ করতে চেষ্টার কমতি নেই। আমেরিকা, ইউরোপ জানতে চেয়েছে শুধু। তবে আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। কেউ এ বিষয়ে প্রশ্নও তুলেনি। নির্বাচনে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক আসছে। আমরা সব ধরনের আতিথেয়তা দেব। পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময়সীমাও আমরা বাড়িয়েছি। তারা মূল্যায়ন করবে ভোট কেমন হলো।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অনেক কিছু ঘটবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু দেখবেন। যারা অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে চায় ওইসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় অনেক কিছু ঘটবে। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টিতে আমরা কাজ করছি। এখানে ছোট-বড় কেউ না। ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের ডাক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অসহযোগ বলতে কী বুঝাচ্ছে সেটি আপনি, আমি কেউ জানি না। অসহযোগ, অবরোধের অর্থ আপনার কাছে এক রকম আবার আমার কাছে আরেক রকম। কতটুকু অসহযোগ, কী অসহযোগ দেখা যাক কি হয়। দেখেন কর্মসূচি কোন দিকে কি যায়।
সভায় ফেনীর জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তারের পরিচালনায় তিনটি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, পুলিশ সুপার জাকির হাসান, বিজিবি-৪ অধিনায়ক রকিবুল হাসান, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ করিমসহ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :