বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক বায়ারদের জানানোর দেড় মাসের মাথায় ৮ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। তৈরি পোশাক খাত নিয়ে এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। এমনকি শ্রমিকদের মাত্র দু’দিনের আন্দোলনকে পুঁজি করে গার্মেন্টস খাতকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
গত ৮ নভেম্বর আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ষ্টিভেন ল্যামার এবং নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাথে হারম্যান বরাবর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানের দেয়া পৃথক চিঠিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের তথ্য অবহিত করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের তুলনায় অন্তত ৫৬ শতাংশ বেশি।
অথচ মজুরি কাঠামোর মীমাংসিত বিষয় নিয়ে দেড় মাস পর ৮ মার্কিন কংগ্রেসম্যান চিঠি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। চিঠির জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বাংলাদেশে কর্মরত বায়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, বিদেশি কংগ্রেসম্যানরা কেন এখানে এসে নাক গালাবেন অথবা কেন চিঠি দেবেন? এক্ষেত্রে তাদের তথ্য-উপাত্ত কী? তারা কীসের ভিত্তিতে এসব কথা বলছেন। আমাদের শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট, এ সংবাদই বা তাদেরকে কে দিয়েছে? আমরা আসলে তা বুঝতে পারছি না।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত চলছে। বিশেষ করে, শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নিয়ে দু’দিনের যে আন্দোলন হয়েছে, তাকে যেমন সামনে নিয়ে এসে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, তেমনি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গার্মেন্টস খাতকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার গুজব ছড়িয়েও উস্কানি দেয়া হচ্ছে।
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দাবি, তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে ভিয়েতনামের পাশাপাশি বেশকিছু দেশও। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি যদি বন্ধ করতে পারে, তাহলে দেশের মধ্যে এক ধরনের অরাজকতা এবং অসন্তোষ তৈরি হবে। সে জন্য একটি পক্ষ দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর বিভিন্নভাবে এসব অশান্তি সৃষ্টি করছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, এসব গুজব ছড়ানোর পেছনে কারা রয়েছেন? আমাদের ওপর ঈর্ষাণ্বিত হয়ে অনেকে এর পিছনে লেগেছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে মাত্র দুদিন আন্দোলন হয়েছে। তাছাড়া আমরা তাদের মজুরি দিচ্ছি না-তাও না; আমরা দিচ্ছি তো! এখন আমরা বুঝতে পারছি না যে, এখানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো শক্তি জড়িত আছে কি না। এগুলো চেক করতে হবে।
বিশ্ব রাজনীতির নানা জটিল সমীকরণে দেশের গার্মেন্টস শিল্প সংকটে পড়লেও তার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বিদেশে থাকা বাংলাদেশি মিশনগুলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে গুজবের পাশাপাশি অপপ্রচার রোধ করতে শক্তিশালী লবিষ্ট নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তাদের খুবই তৎপরতার সঙ্গে আমাদের ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে এবং তাদের বুঝাতে হবে যে,বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে যে বার্তাগুলো যাচ্ছে, সেগুলো ভুল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ সালে ৪৬.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। যেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি হয়েছে ১৮.৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়। তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রতিযোগী দেশ এবং রাজনৈতিক সমীকরণের জটিলতায় সম্পৃক্ত হওয়া উন্নত দেশগুলোর ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত। সেটি এড়িয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ নেতারা।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :