স্বাধীন বাংলাদেশে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রথম বারের মতে কোন রুটে মাত্র ২৭ দিনে ১ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করলো রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলভবন বলছে, বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরুর ২৭ দিনে ২৮ হাজার ৬২০টি টিকিট বিক্রি করেছে রেলওয়ে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থা লোকসান দেবে এটিই রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। কারণ, রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা হিসাবে সাধারণ মানুষের সেবা দেওয়াটাই মুখ্য এমন ব্যাখ্যাও রেলওয়ের কেউ কেউ দিয়ে থাকেন। কিন্তু দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয় বহুল এই পরিবহন সংস্থাটির লোকবল দায়িত্বশীল হলে অন্যান্য রুটও আয়ের মুখ দেখবে।
রেলকে জনবান্ধব পরিবহনে পরিণত করতে আলাদাভাবে ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়’ গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তারপর থেকেই গতি পায় রেলওয়ে। নতুন নতুন রেলপথ ছাড়াও নতুন স্টেশন, রেলপথের সংস্কার, ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ, লোকবল নিয়োগসহ নানা কর্মযজ্ঞ শুরু হয় রেলমন্ত্রণালয় ঘিরে। রেলের নব উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন রুটে নতুন নতুন ট্রেন যুক্ত হওয়ায় আস্থা ফিরে আসে সাধারণ মানুষের কাছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী উদ্যোগের অংশ হিসাবে ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে এটি সর্বপ্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বাণিজ্যিক ট্রেন।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী সংবাদমাধ্যকে জানিয়েছেন, প্রথম মাসে (২৭ দিন) কক্সবাজার এক্সপ্রেসে অনলাইনে ও অপলাইনে এসি ও নন এসির ২৮ হাজার ৬২০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। যা থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ১ জানুয়ারি থেকে আরও দুইটি ট্রেন সংযুক্ত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার অংশ হিসাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষের সেবায় নিবেদীত হয়েছে। রেলকে জনবান্ধব পরিবহন হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের রেলপথ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন রেলপথ দ্রুত সচল করার। পরবর্তী জাতির দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। আমরা অকালে হারালাম বাংলার অবিসংবাদীত নেতা বঙ্গবন্ধুকে। তারপর থেকে থেমে যায় উন্নয়নের চাকা। ৯৬ সালে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত করে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু পর শেখ হাসিনার দুরদর্শিতায় থেমে যাওয়া উন্নয়নের চাকা ফের সচল হয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও শিল্পবাণিজ্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিদ্যুৎসহ নানা খাতে সফলতা আসতে থাকে। এরপর সচল চাকা ফের থমকে যাওয়া যায় ২০০১ সালে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ২০০৯ সালের শুরুতেই দেশপরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে জোরকদমে কাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ ও পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নে হাত লাগান তিনি। রেলকে জন বান্ধব পরিবহনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন। রেলওয়েকে গতিশীল করতে বিগত ১৫ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে উন্নয়নের স্মারক হয়ে থাকবে।
রেলভবন বলছে, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল সংযোগ উদ্বোধন করেন এবং পহেলা ডিসেম্বর থেকে দুইটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের বহু মানুষ স্বল্পমূল্যে এবং নিরাপদে কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। তাতে করে সাধারণ মানুষ উৎফুল্ল।ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা ও এসি বার্থের ভাড়া (শুয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :