`ফুলের মত আপনি ফুটাও গান` প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে শুরু হয়েছে ফুল উৎসব। নানা রঙের ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, গাঁদা। সাথে বিদেশি নানান রঙ্গের-বর্ণের ফুলের বাহার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে সাগর পাড়ে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে। সেই ডিসি পার্কে শুরু হয়েছে ফুলের রাজ্যে ফুল উৎসব। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠা এ পার্কে শুরু হওয়া ফুল উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১ টার সময় মাসব্যাপী এ ফুল উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহাবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মোঃ তোফায়েল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম। ফুল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার প্রায় সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো মাহবুব হোসেন। এই সময় তিনি ১৯৪ একর জমি মাদকের আকড়া থেকে ফুলের আঁকড়াতে রুপান্তর করণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রশংসা করেন। এছাড়াও অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ফ্লাওয়ার ফেস্টিবলের জমকালো আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ দেন।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ফুল উৎসবের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। সামনের প্রজন্ম এর জন্য আমাদেরকেই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য জেলা প্রশাসক গণকেও এই ধরনের আয়োজন করার জন্য উদাত্ত আহ্ববান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন অবৈধ দখল, মাদক অভয়ারণ্য কে ফুলের বাগিচা বানানো হয়েছে। পর্যটনকে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এই উদ্যোগ যেন ক্ষনিকের উদ্যোগ না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেই আহবানে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। এছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের জন্য হাউজিং ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো তোফায়েল ইসলাম জেলা প্রশাসকের ভূয়সী প্রশংসা করে পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ও জঙ্গিবাদকে সমূলে নির্মূল করতে এই ধরনের কালচারাল আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬ টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকারি জমি উদ্ধার করে এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত ‘বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড’। ঝাউগাছ আর জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কটি যুক্ত হয়েছে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। ফৌজদারহাট থেকে এ টোল রোড ধরে কিছুদূর গেলেই ডিসি পার্ক। সড়কের পাশ দিয়ে যেতেই চোখে পড়বে নানা রঙের ফুলের বাহার।
১৯৪ একর জায়গা জুড়ে বিশাল এলাকায় ১২৭ প্রজাতির ফুলের লক্ষাধিক গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। এই ডিসি পার্কে গত বছর আয়োজন করা হয়েছিল প্রথম ফুল উৎসব। যেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছিল দর্শনার্থীদের। এবারের ফুল উৎসবটি ২য় ফুল উৎসব।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, গত বছরের ফুল উৎসবে তারা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলেন। যার কারণে এবছর ১২৭ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুল গাছের সমারোহে নান্দনিকতায় সাজানো হয়েছে এ ডিসি পার্ক।
চট্টগ্রাম বন্দর-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কের ফৌজদারহাটে সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বালুচর শ্রেণির ১৯৪ একরের এ জায়গাটি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘শুকতারা’ নামে একটি পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট। ২০২২ সালের শেষ দিকে রেস্টুরেন্টটি উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। নতুন করে সেখান গড়ে তোলা হয় ডিসি পার্ক।
নানা রঙের ফুল আর গাছ দিয়ে সাজানো এ পার্কে এবছরও ফোটানো হয়েছে টিউলিপ। ফুল উৎসবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ১৫টি সাম্পানের প্রদর্শনী, সাম্পান বাইচ, ঘুড়ি উৎসব, পুতুল নাচ, ভায়োলিন শো, চিত্র প্রদর্শনীর মত নানা ধরনের আয়োজন।
“প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ৩০ টাকায় টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করে ফুল উৎসব উপভোগ করতে পারবেন।” এবছরের ফুল উৎসব উপভোগ করতে পাঁচ লাখের বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পার্কে স্থায়ীভাবে লাগানো ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাকেট ভর্তি ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে ডিসি পার্ক। যেখানে দর্শনার্থীরা বেশ উপভোগ করে সময়, ছবি তোলে স্মরনীয় করে রাখে তাদের জিবনের স্মৃতি।
একুশে সংবাদ/এ.র.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :