ডলার নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। কোনো কৌশলেই বৈদেশিক মুদ্রাটির দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ডলার বিক্রিতে লাভের সর্বোচ্চ হার ঠিক করে দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী মাসে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে টাকার বিপরীতে ডলারের দামের ভিত্তি হবে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (রিয়ার) ও নমিনাল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (নিয়ার)। আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ‘ক্রলিং পেগ’ রেটের সঙ্গে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকার করিডর রাখা হবে। স্মার্ট সুদের হারের আদলে ডলারের দর নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)।
বৈদেশিক মুদ্রানীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাজারের চাহিদাকে পাশ কাটিয়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর ক্রমান্বয়ে না বাড়িয়ে জোর করে আটকানোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, যার ফলে মাত্র আড়াই বছরে ৪৮ বিলিয়নের ডলার ২৪ বিলিয়নের ঘরে নেমে যায়। আর প্রতি ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে ৯০ টাকায় জোর করে আটকানো হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ডলারের দর ব্যাংকে ১১৭ টাকা এবং খোলাবাজারের ১৩১ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
এ অবস্থায় ডলারের দর শতভাগ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবেশ নেই। তাই ক্রলিং পেগ পদ্ধতি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে ডলারের রেট নির্ধারণে বিশেষ দল কাজ করছে। মূলত “ক্রলিং পেগ” পদ্ধতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করেই সময়ে সময়ে ডলারের দর নির্ধারণ করে আসছে বাফেদা ও এবিবি। কিন্তু তাতে ফলাফল ভালো হচ্ছে না। তাই ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন বর্তমান গভর্নর রউফ তালুকদার।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা আছে। তারা মনে করে, একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ঠিক বলা যায় না। এটা একটা অবিশ্বাস। এ জন্য তারা বিনিময় রেট বাজারের ওপর পুরোপুরি ছাড়েনি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবরের মতো ডলারের দাম নির্ধারণ করে না। বরং দেশের ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপরই ছাড়া রয়েছে। বাফেদা ও এবিবি মিলিতভাবে ডলারের দাম নির্ধারণ করে থাকে।
তারা কিন্তু বাজারের ডিমান্ড-সাপ্লাই অ্যাসেস করেই দাম নির্ধারণ করে। বাফেদা তো হঠাৎ করে কোনো বেসিক ছাড়া করে না (দাম নির্ধারণ)। তবে গত মুদ্রানীতিতে ডলারের দর বাজারভিত্তিক না করে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং গভর্নর। এটা নিয়ে কাজ চলছে। দ্রুত সময়ে কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :