প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মত বর্ণাঢ্য আয়োজনে সরস্বতী পূজা উদ্যাপন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক, চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বাণী অর্চনা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যা, বাণী ও সুরের দেবী সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী এই সার্বজনীন উৎসব পালিত হয়।
এদিন সকাল ৮টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় বাণী অর্চনা, ১২টা ১৫ মিনিটে হোম এবং সাড়ে ১২টায় পুষ্পাঞ্জলি, ১২টা ৪০ মিনিটে হাতে খড়ি, ১টায় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, `ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক অনন্য নিদর্শন হিসেবে প্রথমবারের মত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে সরস্বতী পূজা। মানুষে মানুষে অসাধারণ এক মেলবন্ধনের অনন্য উদাহরণ এ সরস্বতী পূজা সবার মঙ্গল বয়ে আনুক। আমাদের সমাজের প্রত্যেকের ধর্ম বিশ্বাস আছে। সেই ধর্ম বিশ্বাস মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলা আনে, নিয়মানুবর্তিতা আনে। দিনব্যাপী আরাধনা ও পূজা করার মধ্য দিয়ে নিজেকে সমর্পণ এবং স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, যেটি সব ধর্মেই আছে।’
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘বিশ্বাস হচ্ছে ধর্মের সবচেয়ে বড় বিষয়। সব ধর্মেরই কিছু রীতিনীতি থাকে যেটি আমরা পালন করি। এসব পালনের মধ্য দিয়ে একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতি, ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। ধর্ম পালনের মাধ্যমে মানুষ সংযম শেখে, আচরণ পরিবর্তন হয়। সেকারণেই ধর্মীয় উৎসব এবং আরাধনার মধ্য দিয়ে মানুষ শুদ্ধতার দিকে যায়। আমি বিশ্বাস করি আজকের এই পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের জীবনকে আরও শুদ্ধতার দিকে নিয়ে যাব। আমরা যে যার ধর্ম পালন করব, কারণ এটি ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কিন্তু ধর্মের উৎসব সব মানুষ একাকার হয়ে করতে পারলে আর দ্বন্দ সংঘাত থাকে না।’
কেউ যেন পূজা মণ্ডপে হামলার মত নিকৃষ্টতম কাজ না করে সেই আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার নিজেদের লক্ষ লক্ষ মানুষকে শরণার্থী করে। আমরা সেরকম বাংলাদেশ চাই না। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে মিলে একটি অপূর্ব বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চাই। যেখানে কখনো হানাহানি হবে না, যুদ্ধ হবে না। একরাতে নিজেদের দেশের মানুষকে আমরা শরণার্থী করব না। আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছি পাহাড়ি বন্ধুদের সাথে একসঙ্গে থাকব বলে। আজকে সব ধর্মের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে- আমাদের হাত দিয়ে কখনো যেন পূজা মণ্ডপে হামলার মত নিকৃষ্টতম ঘটনা না ঘটে। আমাদের হাত দিয়ে যেন মসজিদ অপবিত্র করার মত ঘটনা না ঘটে। এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায়ে রেখে মানুষ তার মনুষ্যত্বের জায়গাকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেবে এটিই ধর্মের শ্রেষ্ঠ বাণী। আপনাদের জীবন আরও শুদ্ধতার হোক, সুন্দর হোক। ভালোবাসায় এই প্রতিষ্ঠান সকলের হয়ে উঠুক।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সরস্বতী পূজা ২০২৪’ উদ্যাপন সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সরস্বতী পূজা ২০২৪ উদযাপন সাংগঠনিক কমিটির সদস্য সচিব জয়ন্ত ভট্টাচার্য্যরে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক মো. সাজেদুল হক, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দপ্তরের পরিচালক মু. আখতারুজ্জামান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক সুমন চক্রবর্তীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :