দীর্ঘ দিন থেকে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল কোদালকাটি ইউনিয়নের কাদের মেম্বার পাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের। স্থানীয় ভাবে শালিশী বৈঠক হলেও কোন সমাধান হয় নি। আজ শনিবার রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নিজে উপস্থিত থেকে দু`পক্ষের কথা শুনে মিমাংসা করে দেন। বাড়ির কাছেই ইউনিয়ন পরিষদে পুলিশের এই সেবা পেয়ে ভিষণ খুশি আলিম উদ্দিন(৬০)।
সাজাই সরকারপাড়া মৃত নছের আলীর কন্যা নাজমা খাতুন (৪০) পারিবারিক কহল নিয়ে স্বামীর সংসার করছিলেন। প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতো স্বামীর সাথে মাঝেমধ্যে মারপিটও করত স্বামী । গ্রামের মাতাব্বরা কয়েকবার মিমাংসা করে দিলেও সংসারে শান্তি ফিরে আসেনি।আজ ওসির কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে নাজমা খাতুনের স্বামীকে ডেকে দুই জনের কাছে ঘটনা শুনে মিমাংসা করে দেন।
`রাজীবপুরের চরে চরে থানা এখন ঘরে ঘরে` এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নতুন পুলিশি সেবা চালু করেছে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আশিকুর রহমান পিপিএম।
উপজেলার দূর্গম প্রান্তিক এলাকার অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আইনি সেবা সহজ ও নিশ্চিত করনের লক্ষে রাজীবপুর থানা পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উপজেলার নদী বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার মাস উপলক্ষে প্রতি শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি অফিস করবেন। সেবা প্রদানের লক্ষে কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষও বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।
এই এলাকার জনসাধারণ এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে মামলা জিডি সহ প্রয়োজনীয় পুলিশি সেবা পাবেন।রাজীবপুর থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ`লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, একটি চমৎকার জনবান্ধন উদ্যোগ নিয়েছেন রাজীবপুর থানার ওসি। একটি জিডি করতে উপজেলা শহরে যেতে বালুচর,নদী সহ দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হয় সাধারণ মানুষের। ইউনিয়ন পরিষদে যদি এই সেবা পাওয়া যায় তাহলে জনগণ খুব উপকৃত হবে। তাদের পরিষদের একটি রুম বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
কোদালকাটি ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের শিক্ষক আমিনুর রহমান মাষ্টার এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। নানা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পুলিশের নতুন ধরনের সেবা দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, গ্রামের জমি, পারিবারিক কহল সহ নানা সমস্যা বিদ্যমান।স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনেক সময় বিষয়গুলো সুরাহ করতে পারে না তাই থানার আশ্রয় নিতে হয়।এখন থানা যদি প্রতি সপ্তাহে একদিন আমাদের ইউনিয়নে আসে তাহলে জনসাধারণের সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে।এছাড়াও এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজীবপুর উপজেলার রেল নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়নের গণকমিটির সদস্য সচিব শিপন মাহমুদ বলেন,রাজীবপুর থানা পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংশনীয়। এতে করে দূর্গম এলাকাটির নাগরিকরা সহজে পুলিশের সেবা পাবেন এবং সেখানকার অপরাধ মূলক কর্মকান্ড কমে আসবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আশিকুর রহমান পিপিএম বলেন,পুলিশ জনগণের সেবক হয়ে এবং জনসাধারনের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে কাজ করছে এবং করবে। আমাদের সেবা প্রাপ্তি সহজকরনের লক্ষে নতুন এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজীবপুর উপজেলাটি দূর্গম এবং এর ইউনিয়ন গুলো নদী বিচ্ছিন্ন। অনেক সময় খুব সামান্য কারনেই মানুষ মামলা দায়ের করতে থানায় আসে। আমরা সেই ছোট্ট সমস্যা গুলো মামলা না নিয়ে সমাধান করতে চাই। এজন্য `রাজীবপুরের চরে চরে থানা এখন ঘরে ঘরে`।নামের নতুন এই সেবা চালু করেছি।
প্রতি শনিবার সকাল সন্ধ্যা ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে আমি এবং আমার থানার কর্মকর্তারা জনগণের আইনি সহায়তা দেবে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :