‘তোমরা আমার আদরের ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। শাকিলের কিছু হলে আমি বাঁচনো না। আমার মানিককে বুকে ফিরিয়ে দাও। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, আমার সন্তানসহ জিম্মি সবাইকে যেন তাদের মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’
সন্তানের জন্য এভাবেই আহাজারি করছিলেন সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিলের (২৪) মা আনোয়ারা বেগম।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) শাকিলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি কয়লা এলাকায় বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। ছেলেকে ফিরে পেতে সারাক্ষণ কাঁদছেন তিনি।
শাকিলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার ছেলে ফোনে আমার কাছে কথা লুকিয়েছে। সে বলে, ‘আমার মোবাইলে এমবি নেই। আমি আগামী অনেকদিন কথা বলতে পারবো না। আব্বাকে দিয়ে আপনার ওষুধ নিয়ে আসিয়েন’। এটাই ছিল তার সঙ্গে শেষ কথা। এরপর থেকে তার ব্যবহত মোবাইলফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।”
শাকিল মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সোনাই গ্রামের শামসুল হক বাড়ির শামসুল হকের ছোট ছেলে। শামসুল হকের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট শাকিল। জলদস্যুদের হাতে আটকের পর শাকিলের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্তানের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন অসুস্থ বাবা-মা।
এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় চার বছর আগে শাকিল চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে উত্তীর্ণ হয়ে জাহাজে যোগ দেন। সবশেষ চার মাস আগে দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে জাহাজে ফিরেছেন। এবার ছুটিতে দেশে এলে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
শাকিলের বড় ভাই আবু বক্কর বলেন, ‘সবশেষ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাত ৮টার দিকে শাকিল আমাকে জানায়, সোমালিয়ান জলসদস্যুরা তাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সবাইকে একটি কক্ষে আটকে রেখেছে। একথা বলে কল কেটে দেয়। পরবর্তী সময়ে রাতে ল্যাপটপের সাহায্যে আমাদের বার্তা পাঠায়, সবার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। হয়তো ল্যাপটপ নিয়ে নিবে। আমার জন্য দোয়া করিয়েন।
তিনি বলেন, ‘আমার আম্মা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। তিনি প্রেশার ও হার্টের রোগী। কিছুতেই উনার কান্না থামাতে পারছি না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, আমার ভাইসহ সবাই যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসে।’
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি থাকা ২৩ জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। এদের মধ্যে একজন ইছাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূঁইয়া গ্রামের সুজাউল হক ভোলা মিয়ার ছেলে আইনুল হক অভি। তারা সপরিবারে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় থাকেন। অভি ওই জাহাজে অয়েলম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আইনুল হকের বড় ভাই মুন্না বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে মঙ্গলবার রাত ৮টায় শেষ কথা হয়েছে। তখন সে বলেছে, আমাদেরকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওইখানে যেতে দুই থেকে তিনদিন লাগবে। আমাদের মোবাইলসহ সবকিছু নিয়ে ফেলবে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন শাকিল নামের একজন সোমালিয়ায় আটক জাহাজে রয়েছেন। তাকে ফিরে পেতে পরিবারের লোকজন আকুতি করছেন। আমরা যতটুকু দেখছি সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, আটক হওয়া সবাই দেশে ফিরে আসবেন।’
গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ।
আপনার মতামত লিখুন :