মুক্তিপণ পাওয়ার পরই জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে মুক্তি দিয়েছে। মুক্তিপণের অর্থ বুঝে পেয়ে ৯টি ছোট নৌকা করে জাহাজটি ছেড়ে যায় ৬৫ জন জলদস্যু। তবে নাবিকরা সুস্থ আছেন।
রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে জাহাজটির মালিকপক্ষ শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের প্রধান কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
কেএসআরএমের জাহাজ চলাচলবিষয়ক কোম্পানি এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুন করিম সংবাদ সম্মেলনে কত টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি (প্রাধান্য) ছিল নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এই কারণে আমরা অনেক দেশের নিয়ম মেনে উদ্ধার প্রক্রিয়া চালিয়েছি।’ আমাদের সঙ্গে ওদের কনফারেন্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য। সেই অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী আমি আপনাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে পারব না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাহাজে অবস্থান করছিলেন ৬৫ জন জলদস্যু। উড়োজাহাজ থেকে মুক্তিপণের ডলার ফেলার পর তারা গুনে নিয়ে ৯টি বোটে করে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছেড়ে যায়। মুক্তিপণ ফেলার আগে জিম্মি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করে এসআর শিপিং। ভিডিওচিত্রে সবাইকে সুস্থ দেখার পরই মুক্তিপণ দেওয়া হয় তাদের।
মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে এক মাস আগে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দখলে নেয় জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়ার উপকূল থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে ছিল।
জাহাজে থাকা নাবিকরা হলেন—জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
২৩ নাবিকদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের ও দুজন নোয়াখালীর। বাকি ১০ জনের বাড়ি ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালে। ৩১ দিন পর মুক্তি পেলেন তারা।
এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএমের মালিকানাধীন বাংলাদেশি আরেক জাহাজ ‘জাহান মণি’। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়েছিল। নানাভাবে চেষ্টা করে ১০০ দিন পর জলদস্যুদের কবল থেকে তাদের মুক্ত করা সম্ভব হয়।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :