AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

১৬ দিনে সড়কে ৩৪৮ মৃত্যু, ২ দিনে ৪৪


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৮:০১ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
১৬ দিনে সড়কে ৩৪৮ মৃত্যু, ২ দিনে ৪৪

গত দুইদিনে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে প্রাণ গেল ৪৪ জনের আর আহত ৪০ জন। আজ বুধবার ঝালকাঠিতে ট্রাক-প্রাইভেটকার-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১৪ জন আর আহত  হয়েছেন ২৫ জন। ১৭ এপ্রিল দুপুরে ঝালকাঠির গাবখান সেতু এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গাবখান সেতু টোল প্লাজায় টাকা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল ইজিবাইক, প্রাইভেটকারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় সিমেন্টবাহী ট্রাকটি সামনে থাকা সব গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে প্রতিবন্ধক ভেঙে রাস্তার পাশে চলে যায়। এতে ইজিবাইকের ৭ আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়া হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও ৭ জন।

এদিকে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজতে ঝালকাটি জেলা প্রশাসক ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ৫ জন এবং আশঙ্কাজন অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এখানে ভিন্ন কিছু আছে কি না তা নিশ্চিত করতে তদন্ত চলছে।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক তারাহ গুল নিঝুম জানান, দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা, যারা পঙ্গুত্বের শিকার হবেন তাদের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং আহতদের জন্য ১ লাখ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, এবারের ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মিলিয়ে ১৬ দিনে দেশে ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪৮ জন নিহত ও ৫৮৫ জন আহত হয়েছেন। জানা গেছে, গত ১৪ বছরে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সে তুলনায় সড়কে চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। বিশেষ করে ঈদ বা বড় কোনো উৎসবের ছুটির সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। যার ধারাবাহিকতায় ঈদুল ফিতরের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জনসহ সারা দেশে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় সারা দেশে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪০ জন। আজ বুধবার ঝালকাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহতসহ আহত হয় আরো ৩০ জন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ১ হাজার ৪৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৬৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৭৭৮ জন আহত হয়েছে। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তাদের হিসেবে গত বছরের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭টি এবং এতে ১ হাজার ৫১ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৪০ জন আহত হয়।

প্রতিবছরই দুই ঈদের সময় রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ ঢাকা ছেড়ে বাড়িমুখী হয়। এবারেও ঈদে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় দেড়  কোটি মানুষ  বাড়ি গিয়েছিল। এ সময় গণপরিবহনের চরম সংকট দেখা দেয়। ঈদের আগে ও পরে সড়কে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। গণপরিবহনে 
বাড়তি চাপ থাকায় চালকের সহকারীরা গাড়ি চালায়। অন্যদিকে যাত্রীর চাপ থাকায় নগরীর গণপরিবহনও উঠে যায় মহাসড়কে। সেই সঙ্গে অনেক মৌসুমি চালকও দূরপাল্লার গাড়ি চালায়। ঈদযাত্রার সুযোগে অনেক ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। এসব কারণে ঈদে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ফরিদপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাসটিরও কোনো কাগজপত্র ছিল না বলে জানান বিআরটিএ। জানা গেছে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ির জন্য সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের তদারকি জোরদার করা হলে দুর্ঘটনার হার কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ঈদে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় সড়কে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। দেশে বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার মতো পরিবহন ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে সড়কে গাড়ির সংকট তৈরি হয়। আর গণপরিবহনে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। সেজন্য পণ্যবাহী গাড়ি দিয়েও অনেকে যাতায়াত করে সড়কে। এ সময়ে যাত্রী পরিবহনে বহুমাত্রিক যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়ক অনিরাপদ হয়ে যায়। ঈদের আগে পরে ১৫ দিন ফাঁকা রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। সেসব কারণে ঈদের সময় দুর্ঘটনা বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পণ্য পরিবহনের গাড়ি যাতে কোনোভাবেই যাত্রী বহন না করতে পারে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর মহাসড়কে যাতে কোনোভাবেই ফিটসেনবিহীন বাস চলাচল করতে না পারে তা মনিটারিং করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমে আসবে অনেকাংশে। নিরাপদ সড়কের জন্য পাঁচ বছর আগে দেশ কাঁপানো আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারের দিক থেকে সড়ক নিরাপদ করতে নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও দেশের সড়ক-মহাসড়ক শেষমেশ নিরাপদ করা যায়নি। ২০২১ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে মারা গেছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জন।

এদিকে বুধবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত মার্চে ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত ও ১২২৮ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে ১৮১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৩ জন নিহত ও ১৬৬ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৭৮ শতাংশ, নিহতের ৩৫.৯২ শতাংশ ও আহতের ১৩.৫১ শতাংশ। একই সময়ে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে সাতটি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৯৭টি দুর্ঘটনায় ৬১২ জন নিহত ও ১৩৩১ জন আহত হয়েছেন।

মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ৩০৬ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে বরিশাল বিভাগে। সেখানে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হয়েছেন।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি।
 

একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা 
 

Link copied!