মহান মে দিবস আগামীকাল। বাংলাদেশে এ দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংগঠন এ দিনটি পালনে কর্মসূচি নিয়েছে।
শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তাদের অধিকারের দাবি সামনে এনেছিল তাদের সন্মানে পালিত হয় এই দিনটি। কালক্রমে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের মর্যাদা পেয়েছে দিনটি। কিন্তু শ্রমের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও। পৃথিবীজুড়ে শোষণ বঞ্চনার শিকার মেহনতি মানুষ। যাদের শ্রমে, ঘামে পৃথিবীর চাকা ঘুর্ণায়মান। তাদের জীবন সংসার অচল। অধিকারহারা, বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষেরা ডুকরে ডুকরে মরছে অযত্ন অবহেলায়। বিলাসবহুল আধুনিক সভ্যতার আয়েশি জীবন চলার পথে যাদের ভূমিকা মুখ্য, অধিকার বঞ্চিত হয়ে তাঁরাই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। এবার ২০২৪ খৃস্টাব্দে শ্রম দিবসের অঙ্গীকার হোক শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন ও সমবণ্টন। প্রতিষ্ঠিত হোক কর্মের মর্যাদা।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয় `মে দিবস। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে, সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না-থাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে `বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার` সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চিন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এ উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
আমেরিকা ও কানাডায় অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যেকোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
একুশে সংবাদ/ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :