মিল্টন সমাদ্দারের অপকর্মের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী মিতু হালদার। রোববার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে আসেন মিতু হালদার। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। এর মধ্যে তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি।
ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসলে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারছি না। আইন ব্যবস্থা নেবে। আইন যেটা করবে সেটাই হবে। তার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
জানা গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। ৬ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে মিতু ডিবিকে জানান, তিনি মিল্টনের প্রতিষ্ঠানে সময় দিতেন না। তিনি তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের নামে যেসব অর্থ এসেছে, সেখানে কোনো কিছুতেই তার নাম নেই।
তবে মিতু তার স্বামীর অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. হারুন অর রশীদ।
ডিবি জানায়, মিল্টনের অপকর্মে মিতুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এ মামলার তদন্ত চলা পর্যন্ত তাকে নজরদারিতে রাখা হবে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান গ্রেফতার মিল্টন যেসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন, টর্চার সেলে আশ্রিতদের নির্যাতন করেছেন, সেখানকার বীভৎস ছবি স্ত্রী মিতুকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। কিন্তু তিনি শুরু থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
এদিকে ডিবি প্রধান আরও জানিয়েছেন, মিল্টন সমাদ্দার বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্তদের ধরে এনে তাদের দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তাদের পেছনে খরচ না করে তা জমিয়েছেন তার ব্যাংক হিসাবে। তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এতে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাদকাসক্ত মিল্টন মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্তদের ধরে আনতেন তিনি। তাদের দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান নিতেন, যা এসব মানুষের পেছনে খরচ করতেন না। বরং তারা অসুস্থ হলে নিজেই তাদের চিকিৎসার নামে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ফেলতেন। তাদের শরীর থেকে বের হওয়া রক্ত দেখে মিল্টন সমাদ্দার পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রয়েছে।
এদিকে প্রতারণার মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড শেষে আজ মিল্টনকে আদালতে তুলেছিল পুলিশ। এরপর মানবপাচার আইনে হওয়া মামলায় তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় মিল্টনকে আরও ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
বুধবার (১ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে ডিবি প্রধান তাকে গ্রেফতারের কথা জানান।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :