যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী। আর আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল থেকেই উন্নয়নটা করা। তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয়টা বৃদ্ধি করা এবং তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা
শনিবার (১১ মে) সকালে রাজধানীর রমনায় ‘বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) এর ৬১তম কনভেনশন’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এই কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল থেকে উন্নয়ই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। সম্পদের সীমাব্ধতা মাথায় রেখে কীভাবে উন্নয়ন সচল রাখা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া যেকোনো প্রকল্প সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজস্ব বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রকৌশলীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছোট্ট ভূখণ্ড, কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠী। কাজেই আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেটা মাথায় রেখেই দেশের জনগণ কতটুকু লাভবান হবে, তা ভেবেই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আর উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী।
প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, কীভাবে জ্বালানি উদ্ভাবন করতে পারি, কীভাবে আমরা স্বল্প খরচে উন্নয়নের কাজটা সচল রাখতে পারি, যোগাযোগ ব্যবস্থার কীভাবে আরও উন্নত করতে পারি, সেটা চিন্তা করেই প্রকল্প নিতে হতে। আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল থেকেই উন্নয়নটা করা। তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয়টা বৃদ্ধি করা। তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে শিল্পায়নের সাথে সাথে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, আমাদের নিজস্ব বিশাল বাজার, সেই বাজার আমাদের সৃষ্টি করতে হবে এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এরইমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে করা হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশে করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ পরিকল্পনা করে কাজ হাতে নেয়া হচ্ছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-কী দিয়েছি আপনাদের তা আপনারাই বলেছেন; ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ভবনের নকশা প্রকৌশলীরা করলেও এর নকশা তিন বার পরিবর্তন করেছিলাম। তাই কক্সবাজারে আইইবির নতুন শাখা কার্যালয় যাতে দৃষ্টিনন্দন হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই নির্মাণ করবেন। উন্নয়নে গতিশীলতা আসুক, সেটাই আমাদের চাওয়া। অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন আপনারা। সেগুলো মার্ক করে নিয়ে যাচ্ছি আমি। উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব, ব্যয় সাশ্রয়ী। জনগণ কতটুকু লাভবান হবে, সেই ভাবেই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। শুধু নির্মাণের জন্যই নির্মাণ করবেন, কিছু কমিশন আসবে; সেসব প্রকল্প গ্রহণ করবেন না। যদি দেখি অহেতুক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তেমন প্রস্তাব আমি পাস করব না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ; পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, উত্তরণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রকৌশলীদের আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উৎপাদন বাড়ছে দেশের। উদ্ভাবনী শক্তি দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে প্রকৌশলীদের। চাহিদা মেটাতে বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সামনে আরও আসছে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ। এক্ষেত্রে কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের রাস্তা বানাতে এতো ব্যয় হয় কেন। যারা এই প্রশ্ন তোলেন, তাদের মাটি সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। আমাদের দেশের মাটির যে ধরণ, তাতে করে আগে মাটিকেই প্রস্তুত করতে হয় প্রকল্পের জন্য। যার কারণে ব্যয় বাড়ে বলেন শেখ হাসিনা।
প্রকৌশলীরা অনেক সময় পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব-পরিকল্পনা করেন, এটা ঠিক না। এমন প্রস্তাব আমি নাকচ করে দিয়েছে এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হাওরে আর মাটি ভরাট করে রাস্তা হবে না, যা নির্মাণ করা হবে, তা হবে উপর দিয়ে। যাতে পানির প্রবাহ নষ্ট না হয়।
বিরোধীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কিছু মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না; কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠী আছে। তারা বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এখানে আছে, পদ্মা সেতুতে রেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দ্বিতীয় স্যাটেলাইট এমন কোনো প্রকল্প নেই, তাদের অভিযোগের তালিকায়! তাদের অহেতুক সমালোচনার পরও যখন মানুষ এসবের সুবিধা পাচ্ছে, জানিনা তারা লজ্জা পাচ্ছেন কিনা।
পরমাণু বিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব। এসব আধুনিক প্রযুক্তি না নিয়ে আমরা সারাজীবনই পেছনে পড়ে থাকবো। যারা সমালোচক, তারা গাড়িতে না উঠে, গরুর গাড়িতে উঠুন, প্লেনে কেন চড়ছেন? মেট্রোরেল নিয়ে অনেক অনেক সমালোচনা ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সমালোচকরা মেট্রোতে উঠছেন কিনা, টানেলে গেলেন কিনা-এগুলো মনে হয়, একটু ছবি তুলে রাখা উচিত। তাদের সমালোচনা থেমে যাওয়ার নয়, আমার লক্ষ্য মানুষের জীবন কীভাবে উন্নয়ন করা হবে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
সুনীল অর্থনীতি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। ক্যাবিনেট, পার্লামেন্ট সব জায়গায় আমাদের সরকার প্রকৌশলীদের জায়গা করে দিয়েছে। প্রকৌশলীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। প্রকৌশলীদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব সরকারের বলেও জানান তিনি।
এবারের কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’। এ কনভেনশনের মূল আকর্ষণ ‘দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফর ট্রান্সফরমিং টেকনোলজি ড্রাইভেন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার। দেশের প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশন এটি।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সভাপতি সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাফল্য ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নির্ধারণ করতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এবারের কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’। কনভেনশনের মূল আকর্ষণ ‘দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফর ট্রান্সফরমিং টেকনোলজি ড্রাইভেন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার।
একুশে সংবাদ/স.ল.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :