রাজধানীর নিকুঞ্জে হোটেল লা মেরিডিয়ানে রোববার (১২ মে) দুপুরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে সৌদি সরকার। এ বিষয়ে সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর সংখ্যা কত আমাদের জানা নেই। তারা আমাদের জানিয়েছে ৬৯ হাজার। সৌদিআরবের নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট না থাকলে তাদের ফেরত পাঠায়। সেক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে সৌদি আরবের একটি চুক্তি হয়েছিলো তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না, তাদের কাগজ রিনিউ করে দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে আমরা স্লো যাচ্ছি কেন? কিংবা আমাদের কোনো অসুবিধা আছে কি না সেটা দেখার জন্য তারা এসেছিলেন। এছাড়াও সৌদিআরবের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে সৌদিআরবে যেসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো রয়েছে আমরা বলেছি তারা যে আমাদের দেশেও এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাঠায় এতে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও শক্ত হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আবর প্রতিনিধি দল উভয় দেশের বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব করেছে। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। যদি সৌদি আবর এই চুক্তি করে তবে ভালো হবে। বাংলাদেশ থেকে তাদের সিকিউরিটি গার্ডের জন্য আনসার প্রেরণের কথা বলেছি। এবিষয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।
আপনারা জানেন যে ভিআইপি নিরাপত্তার জন্য আনসারদের আমরা গার্ড রেজিমেন্টের হিসেবে তৈরি করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেছি। এই বিষয়টি তারাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে যত তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানো যায় সেটি নিয়ে তারা কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা ওয়েভার রয়েছে। ইউএই এর সঙ্গে আমাদের কথা চলছে, ভবিষ্যতে ইউএই এর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে। সৌদি আরব আমাদের সঙ্গে এবিষয়ে সম্মত হয়েছে।
সৌদি আবরে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা দায়িত্ব কোন রাষ্ট্র নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আবর কিন্তু ফেরত পাঠাবে না কাউকে। আবার সৌদি সরকার রোহিঙ্গাদের ওই দেশের নাগরিকত্ব দেবে না। তবে কীভাবে থাকবে। সেই জন্য তাদের কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন সেজন্য তারা আমাদের কে অনুরোধ করেছিল। আমরা গত বছর সেটি স্বাক্ষর করেছিলাম। সেখানে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, বা কোনো লু-ফলস রয়েছে কি না সেবিষয়ে সরাসরি কথা বলতে তারা এসেছিলেন।
সৌদিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা তো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। সুতরা আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দিব। তাদের নাম ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে তেমনি থাকবে।
হজে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার এবার কেমন থাকছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার হজ নিয়ে সুন্দর ব্যবস্থাপনা হয়েছে। আমাদের দেশের ইমিগ্রেশন সিস্টেম চালু হয়ে গিয়েছে। এখানে ইমিগ্রেশন করে আর অপেক্ষা করতে হবে না। এদিকে সৌদি আবর রোড টু মক্কা বলে আরও একটি সিস্টেম চালু করেছেন। হজ্জা যাত্রীরা তাদের লাগেজ এখানে জমা দিবে সৌদিতে হজ যাত্রীদের যে হোটেল রয়েছে সেখানে তাদের লাগেজ পৌছে দেওয়া হবে। আমি আশা করছি, হজ যাত্রীরা এই সুযোগটি নিবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলোচনায় সৌদি আবরের উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সৌদিতে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এই সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/কা.ক/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :