অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই হাত না থাকলেও বন্ধ হয়নি লেখাপড়া। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়াম৷ অভাব, দারিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মেধাবী এই শিক্ষার্থী সিয়াম। এবারের এসএসসি পরিক্ষায় পাশ করেছে সেই পা দিয়ে লিখে পরিক্ষা দেয়া মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়াম। তার প্রাপ্ত নাম্বার জিপিএ ৩.৮৩। লেখাপড়া করে হতে চায় সরকারি চাকুরিজীবি। অভাব মেটাতে চায় সংসারের। হাসি ফোটাতে চায় বাবা-মায়ের মুখে। করতে চায় দেশের সেবা।
পরিবার, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়ার ছেলে সিয়াম। তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম সবার ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত না থাকলেও প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তার লেখাপড়া ও খেলাধুলা। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। প্রতিবেশি শিশুদের সাথে গিয়ে বসে থাকতেন তাদের স্কুলে।
তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে বিভিন্ন অক্ষরের ওপর পা দিয়ে চক পেন্সিলে ঘষামাজা করে লেখা শেখান মানবিক শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা। সেখান থেকেই লেখার অভ্যাস শুরু হয় সিয়ামের। পরবর্তীতে অভ্যাসের সাথে নিজের বাঁম পা দিয়ে লেখার ধারাবাহিকতায় শুরু করে পড়াশোনা। ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে সিয়াম। এর পর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকেই জেএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করে বর্তমানে দশম শ্রেণীর মানবিক বিভাগ থেকে এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে সিয়াম।
দুই হাত না থাকলেও খেলতে পারেন ক্রিকেট খেলা, পারেন পুকুরে সাঁতার কাটতে, নিজেই পা দিয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে গোসল করে, পা দিয়ে চামচ ধরে ভাত মাখিয়ে খায় সিয়াম। বই খোলা ও পাতা উল্টানো, মোবাইল চালানো সহ সকল কাজ পা দিয়েই করে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়াম।
সিয়ামের বাবা জিন্নাহ মিয়া ও মা জোসনা বেগম বলেন, সিয়ামের ছোট থেকেই স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিলো। ছোট বেলায় ওর বয়সীরা স্কুলে গেলে ওদের সাথে আমাদের না বলে চলে যেত। তারপর ওর স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখে আমরা ব্যাক স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করা। ওহ সেটা করছে। এখন সিয়াম এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা খুব খুশি। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারনে আমরা ওকে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে পারি না। এখন কোথাও ভর্তি করাতে পারবো কি না জানি না।
সিয়াম বলেন, আমার আজকে এই পর্যন্ত আসার পেছনে সব থেকে বড় অবদান জাকিয়া সুলতানা ম্যাডামের। যিনি আমাকে পড়ালেখা করার সাহস জুগিয়ে পা দিয়ে আমাকে লেখা শিখিয়েছেন। আমার স্কুলের বন্ধুরা যারা সব সময় আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে। কখনো বুঝতে দেয়নি যে আমি প্রতিবন্ধী৷ তাদের জন্যই আমি আজকে সফল। আমার ইচ্ছে পড়ালেখা শেষ করে সরকারী চাকরি করবো। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাবো, দেশের মানুষের সেবা করবো।
সিয়ামের শিক্ষক ও চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম আমাদের এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বিনা বেতনে তাকে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়েছি৷ সে যদি আমাদের এখানে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয় তাহলে তাকে বিনা বেতনে পড়ানো হবে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :