রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী।
আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে আমাদের সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আর তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। এসময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তারা দেশে ফিরতে পারেন নাই। পরিবারের সঙ্গে শেষ দেখাটাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। বাবা, মা ও ভাইসহ আপনজনদের হারানোর বেদনাকে বুকে ধারণ করে পরবর্তী ছয় বছর তাদের লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে।
শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার ঘটনা প্রবাহের কথা তুলে ধরে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি, ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এটি ছিল আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের এক দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন,
সেদিন বাংলার জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি (শেখ হাসিনা) সিক্ত হন। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে সেদিন তিনি বলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। ...... বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। ’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক। তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়, বিজয় হয় গণতন্ত্রের। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়নসহ সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল সীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে গণমানুষের কল্যাণে নিরলস প্রয়াস চালান।
শেখ হাসিনা সরকারের নানা উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার।
- নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু
- ঢাকার স্বপ্ন মেট্রোরেল
- কর্ণফুলী টানেল
- অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা
- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
- পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর
- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, মহামারি করোনা ও বিশ্বে চলমান যুদ্ধবিগ্রহের প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপে সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকারের নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সরকারের অব্যাহত সাফল্যসহ তার নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করছি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :