গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। পরে আজ বুধবার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো তার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের সূত্রগুলো বলেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তবে বুধবার ভারতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার যে ফ্লাটে এমপি আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এবিপি আনন্দ বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের যে অ্যাপার্টমেন্টে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল, সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, কলকাতায় আনোয়ারুল আজীম আনারের নিখোঁজ হওয়া ও কথিত হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি এখনও রহস্যে ঘেরা। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এবিপি আনন্দ জানিয়েছে, তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বিধাননগর পুলিশের উপকমিশনার মানব শ্রিংলা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছে, ১৩ মে যে ব্যক্তিকে সে গাড়িতে তুলেছিল, তাকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ ছড়িয়ে দিয়েছে।’
এমপি আনার নিখোঁজের ঘটনায় কলকাতার ব্যারাকপুর পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সেখানকার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন যে, সঞ্জিভা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটের ভেতরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতা পুলিশ বুধবার আনোয়ারুল আজীমের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের এই নেতার মোবাইল ফোনও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশি এই এমপি খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে কলকাতা পুলিশ। তার মরদেহ কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় ফেলে রাখা হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময় তারা নিউ টাউনের একটি ফ্লাটে রক্তের দাগও দেখতে পেয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার সঙ্গে ছয়জন জড়িত। এদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে পাঁচজন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি চলে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা। ভারতে যিনি অবস্থান করছেন তাকে আটক করতে চেষ্টা করছে দেশটির পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজিমের সম্পূর্ণ মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দেহের মূল অংশ ট্রলিতে ভরে পাচার করা হয়েছে, আর দেহাবশেষ উদ্ধার করা গেছে।
এর আগে ভারতে যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই সংসদ সদস্যের। রোববার (১৯ মে) পরিবারের পক্ষ থেকে তিনদিন ধরে এমপির সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টি রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে অভিহিত করা হয়।
সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ জানান, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কিন্তু এরপর তিন দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি আরও জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি তদারকি করছে।
ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা তার দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন আনোয়ারুল আজিম। মূলত ডাক্তার দেখানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান তিনি। পরদিন ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন এই সংসদ সদস্য। সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :