বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে ২০ মে ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১(সি) ধারার আওতায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রকাশ্যে সেটি ঘোষণা করেছে। এই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশিকে প্রকাশ্যে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাব এবং বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেটি দিয়েছিল মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারেই প্রথম বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’ অস্ত্রটি ব্যবহার করলো মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি অস্ত্রের ভবিষ্যৎ ব্যবহার কী হবে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নের (অ্যাসেসমেন্ট) ওপর নির্ভর করবে। তবে এটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিকরা।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের অধীনে প্রায় ১৫ বছরে ৬০টি দেশের ৫০০-এর বেশি রাজনীতিবিদ ও আমলা—যারা বিভিন্ন ধরনের সরকারি পদধারী (প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন বা আছেন), তাদের যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে।’
অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের অধীনে যাদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হলেও এর একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা’ আছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানকে ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১(সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের অবনতি’ ও ‘দুর্নীতি’তে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার, যেমন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সুশীল সমাজের গুরুত্ব, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সরব ছিল। সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের কাছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দেশের মধ্যে ‘টেনশন’ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে তারা পেছনে তাকাতে চান না। ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিতে চান। তবে, একইসঙ্গে দুই দেশের জন্য হার্ড ইস্যু (অস্বস্তিকর)—এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনই বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে, সেটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ আছে বলে তিনি জানান।
সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক নম্বর শক্তি। তারা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে তাদের বলয়ে নিতে চায় এবং এটি কোনও গোপন বিষয় নয়। তারা বাংলাদেশে প্রেডিক্টেবল বিহেভিয়ার (অনুমানযোগ্য আচরণ) প্রত্যাশা করে।’
একুশে সংবাদ/ বা.ট্রি/ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :