AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিআরটিসি


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
১০:২২ পিএম, ২২ মে, ২০২৪
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিআরটিসি

  • বহরে যুক্ত হচ্ছে ১০০টি ইলেকট্রিক ডাবল ডেকার বাস
  • কার্বণ নিঃসরণ কমানোর নতুন যুগে প্রবেশ করবে বিআরটিসি
  • ১ হাজার ৮০০ বাসের মাঝে সচল ১ হাজার ১৮২টি
  • তৈরী হচ্ছে নতুন রুট

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বিআরটিসির দুটি মেরামত কারখানায় একসময় ছিল ভুতুড়ে পরিবেশ। কিন্তু বর্তমানে দিনে-রাতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকার তেজগাঁও ও গাজীপুরের প্রধান মেরামত কারখানার শ্রমিকরা। ৩৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরও ১০০টি ডাবল ডেকার আনতে যাচ্ছে বিআরটিসি। এসব ইলেকট্রিক বাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ সুবিধা থাকবে। বাসগুলোর জন্য সাতটি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে কার্বণ নিঃসরণ কমানোর নতুন যুগে প্রবেশ করবে বিআরটিসি।

আগে কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় বাস ও ট্রাকের জটিল ও ভারী মেরামতের কাজ করা হতো না। এখন কারখানাগুলোতে ভারী মেরামতের কাজ হয়ে থাকে। ভারী মেরামতের পাশাপাশি প্রতিটি বাসকে ডেন্টিং ও পেইন্টিং করে দৃষ্টিনন্দন করার কাজও হয়। ভারী মেরামত এবং ডেন্টিং ও পেইন্টিংয়ের জন্য দরকার দক্ষ কারিগর। এই জনবল সংকট দূর করার জন্য স্বচ্ছ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দক্ষ কারিগর নিয়োগ দেওয়া হয়।

পুরনো ও অদক্ষ জনবলকে দক্ষ করার জন্য সমন্বিত কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় বিভিন্ন ব্যাচে প্রায় ২৭০ জনকে ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক সিস্টেম, ডেন্টিং, পেইন্টিং বিষয়ে ও এসি সিস্টেমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কারিগরে পরিণত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ডিপোর মোট ৩০ জন কারিগরকে বডি ডেন্টিং, পেইন্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, 

গাজীপুরে সমন্বিত কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালে ২৬ জুন আবার চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও সমন্বিত মেরামত কারখানার মাধ্যমে করপোরেশনে নিয়োজিত গাড়িগুলোকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে, গাড়িবহরে যুক্ত রেখে নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। গাড়ি মেরামত করে বিআরটিসির বহরে যুক্ত করে রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)র চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম  বলেন, ‘বিআরটিসির যে মেরামত কারখানাগুলো আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের কারখানা। এখানে গাড়ির যাবতীয় মেরামতের কাজ করা হয়। কারখানাগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠার বড় কারণ এখানকার দক্ষ কারিগররা। উন্নত মানের মেশিন দিয়ে কাজ করায় গাড়ির বড় সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হয়ে যায়।’

নিরাপদ ও আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দেশের আর্থ সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) কাজ শুরু করলেও, এখনও তা পুরোপুরি আশার মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন যাত্রীর সাথে উনারা বলেন, 

‘বিআরটিসি বাসে ভাড়া কম হলেও গন্তব্যে যেতে অনেক সময় নেয়। এক একটা স্টপেজে অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এজন্য বিআরটিসি বাসে উঠতে ইচ্ছা করে না। এছাড়া বেশিরভাগ গাড়ি পুরানো। ঠিকমতো মেরামত করে না। গাড়ির সিট ভাঙ্গা থাকে। মাথার ওপরের ফ্যান কাজ করে না। আবার পথে বিকল হওয়াসহ নানা ঝামেলা তো আছেই।’ নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে না পৌঁছানো ছাড়াও বিআরটিসি বাসের ওপর যাত্রীদের অভিযোগ পুরানো বাস, অনুন্নত সেবা, বসার সিট ভাঙ্গা, এসি বা গাড়ির ভেতরের ফ্যান কাজ না করাসহ আরও অনেক কিছু।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে প্রায় ১৮০০ বাস আছে। এরমধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ১ হাজারের মতো। আর বাকি ৬০০ বাস পড়ে রয়েছে বিভিন্ন ডিপোতে, যার অধিকাংশই অকেজো। সচল বাসের মধ্যে প্রায় ৪৫০টি ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন অফিসের স্টাফ এবং বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার কাজে। সিটি সার্ভিসের পাশাপাশি দেশের ১৬৩টি রুটে ৪২০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে।

বিআরটিসির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, 

মোট বাস ডিপো ২১টি। ট্রাক ডিপো ২টি। মোট বাস সংখ্যা ১৮৩০টি। এরমধ্যে নতুন বাস ৬০০টি এবং পুরানো ১ হাজার ২৩০টি। চলমান আছে ১ হাজার ১৮২টি। নিবন্ধনের অপেক্ষায় নতুন বাস ৩২৫টি। বিইআর বা বিয়ন্ড ইকনমিক্যাল রিপেয়ার ২৪৮টি। হালকা ও ভারী মেরামতের অপেক্ষায় আছে ৭৫টি বাস।

ঢাকা মহানগরীতে চলমান বিআরটিসি বাসের সংখ্যা ৭২৩টি; যার মধ্যে গণপরিবহন ৪৬৩টি, স্টাফ বাস ২৩৫টি, স্কুল বাস ৮টি এবং মহিলা বাস ১৭টি। ঢাকার বাইরে চলে ৩৬৩টি বাস, এগুলোর মধ্যে গণপরিবহন ৩০২টি, স্টাফ বাস ৫৮টি এবং মহিলা বাস ৩টি, লীজে পরিচালিত হয় ৯৬টি। ঢাকা মহানগরীতে চলমান রুট ২৮ এবং ঢাকার বাইরে চলমান রুট ১৩৪।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৬৪টি রুটে তাদের ২০২টি স্টাফ বাস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৮১টি বাস নিয়মিত চলাচল করছে।

এদিকে রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল ও মোহাম্মদপুরে চক্রাকার বাস সার্ভিসের আওতায় চলছে ৭টি বাস। বাংলাদেশ-ভারত সরাসরি বাস সার্ভিসের আওতায় ৫টি বাস চলাচল করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নারীদের জন্য বিআরটিসির ৯টি বিশেষ বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের স্বল্প ভাড়ায় ও নিরাপদে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল রুটে একটি বাস ও চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য কম ভাড়ায় ও নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ১০টি বিআরটিসি বাস স্টুডেন্ট সার্ভিস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, 

মতিঝিল বাস ডিপোতে ২০৪টি বাসের মধ্যে সচল ১২৭টি। কল্যাণপুর বাস ডিপোতে গাড়ির সংখ্যা ২১৪টি, তার মধ্যে সচল বাস ১৪১টি। বড় ধরনের মেরামতে আছে তিনটি। বিয়ন্ড ইকোনমিক্যাল রিপেয়ার বা বিইআর-এর আওতায় অকেজো বাস আছে ৫০টি।

বিআরটিসি বিভিন্ন মেয়াদে গাড়ি লিজ দেয়। যে কেউ তাদের কাছ থেকে লিজ নিতে পারেন। পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর মেয়াদি লিজ দেয়। সংস্থাটি জানায়, লং লিজে পরিচালিত ২০টি বাসের মধ্যে ৩টি বাস ব্যক্তিমালিকানায় চলাচল করছে। বাকি ১৭টি বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এদিকে গাবতলী বাস ডিপোতে মোট গাড়ির সংখ্যা ৬৪টি, এরমধ্যে সচল বাস ৬৩টি। মিরপুর বাস ডিপোতে গাড়ির সংখ্যা ১৪২টি। তার মধ্যে সচল ১২২টি। মোহাম্মদপুর বাস ডিপোতে ৩৩টি গাড়ি রয়েছে। সবগুলোই সচল অবস্থায় আছে।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাঝে কয়েকটি বছর বাদ দিলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মিত লোকসান গুনেছে রাষ্টায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিআরটিসির বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, গত ২২-২৩ অর্থবছরে বিআরটিসি লোকসান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আগামীর বিআরটিসি নিয়ে পরিকল্পনা-

বিআরটিসি বহরে ইলেকট্রিক ভেহিকলসহ নতুন মডেলের বাস সংযুক্ত করা, 

কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসহ আধুনিক সুবিধাসম্বলিত অফিস ভবন নির্মাণ, সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ডিপো ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু করা, বাংলাবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে নতুন ২টি বাস ডিপো এবং খুলনা ও বগুড়ায় ২টি ট্রাক ডিপো স্থাপন।

এছাড়া বরিশাল-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা ও ঢাকা-গ্যাংটক (সিকিম)-দার্জিলিং, ঢাকা-নেপাল আন্তর্জাতিক বাস রুট চালু করা। সব পরিবহনের জন্য বিআরটিসি’কে আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা। ,ইলেকট্রিক ভেহিকল পরিচালনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চার্জিং স্টেশন স্থাপন ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বিআরটিসি’কে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা। বিআরটিসির অর্গানোগ্রাম ও চাকরি প্রবিধানমালা মোতাবেক শূন্য পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদানসহ বিআরটিসির সব ডিপো/ইউনিটে গাড়ি মেরামত করে সচল গাড়ি সংখ্যা বৃদ্ধি করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বিআরটিসির সব ডিপো/ইউনিটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা।

 

একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
 

Link copied!