পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সারা দেশে প্রায় এক মাস ধরে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিকল্প উপায়ে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসিও (বিএসসিপিএলসি)। তবে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরতে আরো প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বিএসসিপিএলসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়ে। সেখানে মেরামতের কাজ শুরুর প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ। অনুমোদন মিলেছে, এখন কনসোর্টিয়ামের জাহাজের অপেক্ষা। মেরামত শেষে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো অন্তত দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ দেশে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হতে পারে।
জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিক থেকে সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি দেখা দেয়। বিএসসিপিএলসি জানতে পারে সিঙ্গাপুরে জলসীমায় কোথাও ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। পরে আরো অনুসন্ধানে জানা যায় সিঙ্গাপুর নয়, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ক্যাবল ‘ব্রেক’ করেছে। এতে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার বিএসসিপিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ জানান, সিমিউই-৫ (দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল) দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হয়। সেটা এখন পুরোপুরি বন্ধ। আমরা ঐ ব্যান্ডউইথ এখন সিমিউই-৪ দিয়ে সরবরাহের চেষ্টা করছি। অন্তত ৬০ শতাংশ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। এটা দিয়ে বিকল্প উপায়ে সারাদেশে ইন্টারনেট সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।
কবে নাগাদ মেরামত শেষ হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আশা করছি, চলতি মাসেই কাজ শেষ হবে। জুনের প্রথম দিকে আমরা সিমিউই-৫-এর সংযোগে আবার যুক্ত হবো। এরপর ব্যান্ডউইথ স্বাভাবিক করতে আরও ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা লাগতে পারে। বলা যায়, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে এটা (ইন্টারনেটের ধীরগতি) ঠিক হয়ে যাবে।
তবে ক্যাবল কাটা পড়ে সিমিউই-৫-এর সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে যে সমস্যা হয়েছিল, তার পাশাপাশি অন্য একটি সমস্যার কথাও জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. ইমদাদুল হক।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিটিআরসি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ইন্টারনেট সরঞ্জামের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এতে অবৈধ অনেক আইএসপি প্রতিষ্ঠান, অনেকে ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ চালায়, তাদের যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে। ক্যাবল অপারেটরদের ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়ার কথা না। তারা দিচ্ছে, এ জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি। সবমিলিয়ে ইন্টারনেটের গতিতে এবং সংযোগে প্রভাব পড়েছে। সেজন্যই কিছু এলাকায় বেশি সমস্যা।
বিএসসিপিএলসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৫ হাজার জিবিপিএসের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি প্রায় দুই হাজার ৭০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) লাইসেন্সের মাধ্যমে আসে, যা ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়। বাকি দুই হাজার ৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে বিএসসিপিএলসি। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়।
বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছিল। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে। এটি প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে থাকে।
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ প্রবেশ করেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এক হাজার ৬০০ জিবিপিএস সরবরাহ করা হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ৬০ শতাংশের বেশি ব্যান্ডউইথ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে শিফটিং করা হয়েছে, যা দিয়ে বিকল্প উপায়ে দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বিএসসিপিএলসি।
একুশে সংবাদ/ই.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :