ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আজীমের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিন। হতযাড় পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। তাকে সেখান থেকে ফেরত আনতে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়ও তাকে দেশে ফেরত আনতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শাহিনের জন্য ইন্টারপোলে, আর সিয়ামের জন্য নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
বৃহম্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে কলকাতা থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
হারুন অর রশীদ বলেন, কলকাতায় আমাদের তদন্ত কাজ সফল হয়েছে। এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছি, তা পেয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সিআইডিকে চিঠি দিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো বাংলাদেশে নেওয়া হবে বলে জানান হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, মাংসের টুকরোগুলো আজীমের মরদেহের মনে হলেও এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক এবং ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ভারতীয় পুলিশ ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করে জানাবে।
বিমানে উঠার আগে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। ‘ওয়াটার থিওরি’ ঢাকার ডিবির সফলতা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘ওয়াটার থিওরি’র কথা তারা আমলে নেন।
আসামিদের দাবি–সঞ্জীবা গার্ডেনের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের ওপর থেকে তারা পানির তীব্র গন্ধ পেয়েছিলেন। এরপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে অনুরোধ করে কমোড, সেপটিক ট্যাংক, সুয়ারেজ লাইন পরীক্ষা করা হয়। এরপরেই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কেজি টুকরো মাংস।
উদ্ধার হওয়া মাংস এমপি আজীমের মরদেহের টুকরো কিনা, তা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই নমুনা পাঠানো হয়েছে ভারতের ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে’। কলকাতায় ডাকা হতে পারে এমপি কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডরিনকে।
আজীম হত্যার ঘটনায় ঢাকা ও কলকাতায় দুটি মামলা হয়েছে। গত ২৬ মে হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির তিন সদস্যর প্রতিনিধি দল কলকাতায় যান। কলকাতায় দায়ের হওয়ার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে দলটি কৃষষ্ণমাটি বাগজোলা খাল পরিদর্শন করে। এরপর যথাক্রমে নিউটাউনের সঞ্জীবা আবাসন, সিআইডি ভবন, হাতিশাল খালসহ বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, সিআইডি এডিজি আর রাজাশেখরণের সঙ্গে সাক্ষাত করেন হারুন অর রশীদ।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আজীম। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আজীম। গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কলকাতার নিউ টাউন থানার পুলিশ ও সিআইডির কর্মকর্তারা। পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে ডিবির প্রতিনিধি দল কথা বলেছে।
খুনের ঘটনা ২২ মে সামনে আসায় ওইদিনই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় তার মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিবি চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, তার চাচাতো ভাই তানভীর ভূঁইয়া ও শাহীনের বান্ধবী সেলেস্টিল রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। এছাড়া কলকাতা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দেশটির পুলিশ।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :