AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গৃহবধূকে ধর্ষণ, আত্মহত্যা : জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৭:২৮ পিএম, ২ জুন, ২০২৪
গৃহবধূকে ধর্ষণ, আত্মহত্যা : জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের

পাওনা টাকার জন্য গৃহবধূকে দিনের পর দিন ধর্ষণ, বিষপানে ‘আত্মহত্যা’ শীর্ষক সংবাদের ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্ত করতে ও ‍পুলিশ সুপারকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ধার নেয়া ২০ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে দুই মাস ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করে বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। এতে স্বামী বেঁচে গেলেও ওই গৃহবধূ মারা যান। ওই দম্পতির তিন বছরের একটি শিশুসন্তান রয়েছে।

রাজীবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে গত ২৪ মে ওই গৃহবধূ বিষপান করেন। দুটি হাসপাতাল ঘুরে পাঁচদিন পর গত ২৯ মে দুপুরে বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে ২২ মে স্থানীয় এক সাংবাদিককে দেয়া গৃহবধূর একটি অডিও রেকর্ডে পাওনা টাকার জন্য উপজেলা সদরের হলোপাড়া গ্রামের জয়নাল মিয়া, তার সহযোগী শুক্কুর ও সোলেমানের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূ। ২০ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের অডিওতে গৃহবধূ নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। অভিযুক্তরা পেশায় কসাইয়ের কাজ করেন। রাজীবপুর বাজারে তাদের মাংসের দোকান আছে।

অডিওতে গৃহবধূ উল্লেখ করেন, তার স্বামী দিনমজুরের কাজের জন্য টাঙ্গাইলে থাকেন। কয়েক মাস আগে অভাবের কারণে তার স্বামী অভিযুক্ত জয়নালের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার করেন। ওই টাকার জন্য জয়নাল তাকে (গৃহবধূ) চাপ দিয়ে আসছিলেন। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জয়নাল তাকে শারীরিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব দেন। গত রোজার মাস থেকে তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করেন জয়নাল। একপর্যায়ে জয়নালের সহযোগী সোলেমান মোবাইলে জয়নালের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করেন এবং তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখান। এরপর জয়নাল, শুক্কুর ও সোলেমান দিনের পর দিন ওই গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করতে থাকেন। স্বামী বাড়িতে ফিরলে তাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানান তিনি। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ দিলেও কেউ বিচার করেননি। গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দূর সম্পর্কের এক মামাকে জানিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে থানায় মামলা করতে যান।

কিন্তু থানায় পৌঁছানোর আগেই রাজীবপুর ইসলামী ব্যাংকের সামনে পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলাম, আমেজ উদ্দিন ও জয়নাল পথরোধ করে বাসায় ফিরে যেতে বলেন এবং রাতে বাড়িতে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দেন।

গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘আমরা বাসায় ফিরে এলে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে কনস্টেবল রবিউল, (পুলিশের) গাড়িচালক মোজাহারুল ইসলাম, জয়নাল, সোলেমান ও শুক্কুর আমার বাড়িতে আসেন। তারা আমাকে ২০ হাজার টাকা দিতে চান এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাই। পরে তারা কোনো সমাধান না দিয়ে চলে যান। সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ায় শুক্রবার (২৪ মে) বিকেলে আমরা স্বামী-স্ত্রী আত্মহত্যার জন্য বিষ খাই।’

গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ২৯ মে স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও আমেজ উদ্দিন তার বাড়িতে আসেন। তখন শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। তারা চিকিৎসার খরচের জন্য এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং একটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে তার পরিবারের পক্ষে কেউ টাকা দিয়েছেন কি না, তিনি জানেন না।

রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ধর্ষণের কোনো অভিযোগ পাননি। স্বামী-স্ত্রী বিষপান করেছিলেন। এর মধ্যে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে রাজীবপুর থানার ওসিকে কল করা হলে তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর আওতায় নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং প্রধান আসামি জয়নালসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত সমাপ্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে।

ধারের ২০ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূকে দুই মাস ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পরবর্তীতে পুলিশের বাধার কারণে থানায় মামলা করতে না পারা, স্থানীয় ইউপি সদস্য কর্তৃক চিকিৎসার খরচের জন্য এক লাখ টাকা দাবি করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া সংক্রান্ত অভিযোগগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

সুয়োমটোতে বলা হয়, এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে। এ অবস্থায় পুলিশের বাধার কারণে থানায় মামলা করতে না পারা এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য কর্তৃক চিকিৎসার খরচের জন্য এক লাখ টাকা দাবি করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া সংক্রান্ত অভিযোগগুলো একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তপূর্বক কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে বলা হলো এবং দায়ের করা মামলার তদন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে জরুরি ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী কমিশনকে অবহিত করতে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।

আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য করতে বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

একুশে সংবাদ/ চ্যা.২৪/ এসএডি

 

Link copied!