পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেন শেষঅই হচ্ছে না। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন উঠছে তার বিরুদ্ধে। এবার তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট নেন বেনজীর। নবায়নের সময় বিষয়টি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নজরে আসলে পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে তা ম্যানেজ করেন। মূলত সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের দুই ভাই যে প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট করেছিলেন, সেই একই কায়দায় পাসপোর্ট নেন বেনজীর।
২০১০ সালের ১১ অক্টোবর পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন বেনজীর। সেখানে তিনি আসল পরিচয় আড়াল করে নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেন। আবেদন ফরমে পেশা হিসাবে লেখেন ‘প্রাইভেট সার্ভিস’। নবায়নকৃত সেই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ফের পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেন। অথচ তিনি তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার।
এরপর ২০১৬ সালে বেনজীর যখন ফের পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন তখন তিনি র্যাব মহাপরিচালক। এবারও তিনি নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে উপস্থাপন করেন। মূলত তখনই ধরা পড়ে তার তথ্য গোপন ও জালিয়াতির ঘটনা। মিথ্যা তথ্যে পাসপোর্ট নেওয়া ছাড়াও বেনজীরের পাসপোর্টে আরও কয়েকটি বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় বেনজীর চাইলে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট নিতে পারতেন। পুলিশপ্রধান হয়ে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসাবে লাল পাসপোর্টও নিতে পারতেন তিনি। কিন্তু আইজিপি হয়েও তিনি ফের বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেন। এতো সুযোগ থাকার পরেও কেন তিনি সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য এতো কিছু করলেন?
সূত্র বলছে, সরকারি চাকরি করেও নানা কারণে অনেকেই সাধারণ পাসপোর্ট নিয়ে থাকেন। এর একটি বড় কারণ ভিন্ন কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুবিধা নেওয়া। কারণ সরকারি পাসপোর্ট থাকলে অন্য দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ বেশ জটিল। এছাড়া দেশের বাইরে যেতে বেসরকারি পাসপোর্টে জটিলতা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় দেশ ত্যাগের সুযোগ খোলা রাখতে হয়তো তিনি সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়াকে নিরাপদ মনে করেছেন। তবে এটি ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতি। যারা জালিয়াতিপূর্ণ পাসপোর্ট ইস্যু করেছে তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
উল্লেখ্য, গত ৪ মে পরিবারসহ সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্য দেশ ছাড়েন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, নামে-বেনামে কয়েক শ’ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :