ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের দেহাংশের সন্ধানে এবার যুক্ত হল ভারতের নৌবাহিনী। কলকাতার গোয়েন্দাদের সাথে যুক্ত হয়ে তারা তল্লাশি অভিযানে শুরু করেছে।
সোমবার (৩ জুন) দুপুরের পর আনারের মাথা ও দেহাংশের খোঁজে কৃষ্ণমাটির বাগজোলা খালে নৌ বাহিনীরে সদস্যরা তল্লাশি শুরু করে। সঙ্গে রয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ও কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা।
ওই খালে কসাই জিহাদকে নিয়ে এর আগেও কয়েকবার অভিযান চালায় পুলিশ। সঙ্গে নেওয়া হয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিদের। বিভিন্নভাবে তল্লাশি চালিয়েও সেখান থেকে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এমপি আনাদের মরদেহ টুকরো টুকরো করে বেশকিছু অংশ ওই খালেই ফেলা হয়েছিল বলে বদ্ধমূল ধারণা কলকাতা সিআইডির। খালের পানি নোংরা ও ঘোলা এবং কাদা, মাটি ভর্তি থাকায় উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হাড় বা মাথার খুলির অংশ উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করছে তারা।
তাই ভারতের নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিআইডি তল্লাশি চালানোর আবেদন করে বলে খবর দেয় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। সেই অনুমতি মেলার পর নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেয়া মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ।
আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। নেপালে গ্রেপ্তার হয়েছে সিয়াম হোসেন নামে আরেক অভিযুক্ত। সিয়ামও মরদেহ ফেলায় অংশ নিয়েছিল বলে সন্দেহ।
এদিকে গত সপ্তাহে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ জানিয়েছেন, নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনসের বাথরুমে টুকরো টুকরো করা হয় এমপি আনারের লাশ। পরে সেগুলো পলিথিনে ভরে ট্রলিতে করে নিয়ে পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন খালে ফেলে দেয়া হয়েছে।
ঢাকার আদালতে সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকার আদালতে সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
কসাই জিহাদকে নিয়ে খুনের ঘটনাস্থল কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাট এবং একটি বর্জ্যখাল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
এ সময় সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেই ফ্ল্যাটে নেয়া হয় কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সঙ্গে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে।
পরে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশকে সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে অনুসন্ধান করা হয়। সেখানকার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় মাংসের বেশকিছু টুকরো।
তবে সেগুলো এমপি আনারের দেহাংশ কিনা, তা জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মাংসপিণ্ড উদ্ধার হলেও আনারের দেহের হাড় কিংবা মাথার অংশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি সিআইডি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওই ফরেন্সিক রিপোর্ট আসবে। তা পজিটিভ হলে সংসদ সদস্যের মেয়ে কিংবা এবং তার ভাইকে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিংয়ের জন্য ডাকা হবে। প্রায় একইসঙ্গে হাড় এবং মাথার খুলি উদ্ধার করা গেলে তদন্তের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মনে করছে সিআইডি।
একুশে সংবাদ/এ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :