পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা ও তার মেয়েরা দুদকে হাজির হননি। ১৫ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ জুন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দুদকের সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা, মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর কমিশনে উপস্থিত না হওয়ায় আজ (রোববার) শুনানি হয়নি। আগামী ২৪ জুন তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল দুদকের। তিনিও সেদিন হাজির না হয়ে ১৫ দিন সময়ের আবেদন করেন। পরে আগামী ২৩ জুন বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারণ করে দুদক।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয়।
পরে গত ২৮ মে দুদক চিঠি দিয়ে বেনজীরকে ৬ জুন ও তার স্ত্রী ও মেয়েদের ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলে। কিন্তু এর মধ্যেই জানা গেছে যে স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে বেনজীর দেশের বাইরে গেছেন।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আশ-শামস জগলুল হোসেন বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পত্তি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেন।
তার সাভারের সম্পত্তি দেখবেন সেখানকার ইউএনও, গোপালগঞ্জের মাছের খামার দেখবেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। এ ছাড়া মাদারীপুর ও কক্সবাজারের সম্পত্তি দেখাশোনা করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, বেনজীরের বিশাল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ছয়টি কোম্পানি।
পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সন্ধান পায় দুদক। এরপর সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বেনজীরের সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলায়। গোপালগঞ্জ সদরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি দলিলে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলে ৪৭ শতাংশ, কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন।
এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈরে ২০২১ ও ২০২২ সালে তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
একুশে সংবাদ/ আর.টি/ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :