‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪ শুরু হয়েছে। গত ৫ জুন শেরেবাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন।
বৃক্ষমেলা বাংলাদেশের জনসাধারণকে কৃষি, বন, বনায়ন এর গুরুত্ব ও পরিবেশের উপর বনের প্রভাব সম্পর্কিত ধারণা বাস্তবিকভাবে প্রদানের একটি উৎকৃষ্ট প্রচেষ্টা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বন অধিদপ্তর মাসব্যাপী এ বৃক্ষমেলার আয়োজন করে। সাধারণত এই মেলায় জনগণের মাঝে কৃষি এবং বৃক্ষ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ফুল, ফল সম্পর্কিত উন্নত জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং ফসল বৃক্ষের চারা উৎপাদন রোপণ সুস্থ ব্যবহারের আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়।
মেলা কর্তৃপক্ষ জানান, এই বৃক্ষমেলা করার মূল উদ্দেশ্য বৃক্ষরোপণকে একটি অভিযানের রূপান্তরিত করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। মেলার তাৎপর্য গণমানুষের কাছে পৌঁছন এর লক্ষ্যে বর্ণাঢ্য রেলি ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার স্টিকার দিয়ে ব্যাপক প্রচার করা হয়ে থাকে। এবারের বৃক্ষ মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ভেষজ উদ্ভিদের প্রদর্শনী, বিপণন ও রোপনে মানুষকে উৎসাহিত করার হচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলছে। মেলা চলবে জুনের ৫ তারিখ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত। এরপর ঈদের ছুটির পর পুনরায় এ মেলা ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এবারের মেলায় ২০০টির ওপরে স্টল রয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নার্সারি ব্যবসায়ীরা এসছে। বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ-বনজ এবং ওষধী গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। থরে-থরে সাজানো হয়েছে এসব গাছগুলো। দেখতে বেশ বাহারি চমৎকার।
বরিশাল নার্সারি:
এখানে বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে মৌসুমি আমসহ বিভিন্ন জাতের আমের চারা পাওয়া যাচ্ছে। লিচু, কাঁঠাল, জাম, আমলকি, বয়রা, আমরা, পেয়ারা, জাম্বুরা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। প্রকার ভেদে এক একটি চারার মূল্য একএক রকম। আমসহ একটি আমের চারার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে আম ছাড়া ছোট আকারের একটি চারা পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায়। এখানে একটি জামগাছ জামসহ ড্রামে রাখা হয়েছে, এটার দাম হাঁকানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ স্টলে মোটামুটি সব রকমের ফলের গাছ পাওয়া যাবে। প্রকার ভেদে এর দাম ৩০০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইব্রাহিম জানান, ‘আমার এখানে প্রায় সব জাতের ফলের গাছ পাবেন। ছোট, বড়, মাঝারি সাইজ এবং কোয়ালিটি অনুযায়ী এর দাম ধরা আছে। আমরা গাছের দাম অতিরিক্ত নেই না। লাভ কম করে শুধু প্রচারের জন্য মেলা অংশ নিয়েছি।’
কিশোরগঞ্জ নার্সারি:
জাতীয় বৃক্ষমেলায় তারা পুরস্কারপ্রাপ্ত স্টল, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘আমার এখানে বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলের চারা পাইকারি খুচরা বিক্রয় করা হয়। অর্ডার সরবরাহ করে থাকি আমরা। জাতীয় বৃক্ষমেলায় আমরা শুধু প্রচারের জন্য স্টল নিয়ে থাকি। আমাদের নিজস্ব নার্সারিতে আমরা যে চারা গুলো সযত্নে লালন করি। পছন্দ হলে বাসা বাড়ির জন্য অর্ডার করতে পারেন, আমরা অর্ডার করার সাথে সাথে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে খুবই জনপ্রিয় কিছু আমের চারা পাবেন, যেটা সচরাচর অন্য কোন স্টলে দেখা যাবে না। ফলন্ত আমসহ এই চারাগুলো আমরা সরবরাহ করে থাকি। আমের পাশাপাশি আমাদের দেশে যেসব ফল খুব বেশি পরিচিত, সব ফলের চারাগাছ আমাদের এখানে পাওয়া যাবে। আমরা খুব যত্নসহকারে এই চারা গাছগুলোকে ছোট থেকে বড় করি। বিগত মেলায় আমাদের কার্যক্রম ভালো হওয়ার কারণে এবং আমাদের নার্সারির চারাগুলো ভালো হওয়ার কারণে, আমরা জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। এবারে আমার বিশ্বাস এই মেলায় আমরাই সেরা হব।’
আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টার:
ঢাকার কাছের একটি বিশাল আকৃতির নার্সারি এটি। এই নার্সারিতে বিভিন্ন প্রকারের ফুল ও ফলের চারা গাছ পাওয়া যায়। আকার এবং প্রকার ভেদে এখানে গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সানি সরকার জানান, ‘আমাদের নার্সারিতে মৌসুমি ফলন্ত আমসহ বিভিন্ন আমের চারা পাওয়া যায়। আমের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির ফলের চারা রয়েছে এখানে। যার মূল্য সর্বনিম্ন ৩০০০ টাকা এবং ফলন্ত সুস্বাদু আমসহ একটি আমের চারা মূল্য হাঁকানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। টিনের ড্রামে লটকন গাছের চারা লটকনসহ যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০০ টাকা।’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী জহির জানান, ‘আমাদের নার্সারির সবগুলি গাছের চারাই আমরা খুব যত্ন সহকারে এখানে উপস্থাপন করেছি। অর্ডার করলে আমরা বাসা বাড়িতে পৌঁছে দেই।’
মেলায় আগত স্কুল শিক্ষার্থী ফারজানা বলেন, ‘বাবার সাথে গাছের মেলায় এসেছি। এখানে অনেক রকমের আম গাছ। আমগুলো পাকা, দেখতে অনেক সুন্দর। বাবাকে বলেছি আমার জন্য একটি আমের চারা নিতে। বাবা বলেছে আমাকে একটি আমের চারা কিনে দিবে। আমি বাসার বারান্দায় আম গাছ লাগাবো। বাবা খাবে, আম্মুও খাবে, দাদাকেও দিব।’
জাতীয় বৃক্ষমেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন বলে জানিয়েছে বন বিভাগে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘মেলায় বন বিভাগের একটি তথ্য কেন্দ্র রয়েছে, প্রয়োজনীয় সব রকমের তথ্য পাওয়া যাবে। মেলার বাহিরে সুবিশাল গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই সেখানে গাড়ি পার্কিং করে আপনি মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। সেখানেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :