সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পুলিশ কর্তৃক চামড়াবাহী একটি পিকআপ ভ্যান আটকে রাখা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। শুক্রবার (২১ জুন) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কবীর আহম্মেদ এর সই করা বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, চামড়াবাহী একটি পিকআপ ভ্যান আটকে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত জেলা পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়। উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাৎক্ষণিক সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নােমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধান কমিটি সরেজমিনে উক্ত ঘটনা অনুসন্ধান করে।
অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালােচনাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৮ জুন রাত আনুমানিক ১ টা ৪৫ মিনিটে আনােয়ারা থেকে শহরমুখী ৪টি পিকআপ আসতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় রাত্রিকালীন মােবাইল ডিউটিতে নিয়োজিত আনােয়ারা থানার এসআই হোসেন ইবনে নাঈম ভূঁইয়া থামার সংকেত দিলে ৩টি পিকআপ দিক পরিবর্তন করে উল্টো দিকে চলে যায়। সংবাদে উল্লিখিত পিকআপটিকে থামিয়ে চালক ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের গন্তব্যের ব্যাপারে সন্দেহ হওয়ায় উক্ত এসআই পিকআপটিকে যাচাই বাছাইয়ের জন্য থানায় নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য যে, সরকারিভাবে দেশের সকল প্রান্ত হতে ঢাকায় একত্রে সকল চামড়া প্রবেশ করে যেন পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঈদ পরবর্তী ন্যূনতম ১০ দিন কোন চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মাচেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক পরিবহন ও ট্রান্সপাের্টের মাধ্যমে কাঁচা চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকায় পাচাররােধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার অনুরােধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট কাজ করে।অনুসন্ধানকালে থানার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালােচনায় দেখা যায়, রাত ১ টা ৫৩ মিনিটে পিকআপটি থানায় প্রবেশ করে এবং রাত ২ টা ২৯ টায় থানা হতে বের হয়ে যায়। একজন সাংবাদিক আনােয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জের সরকারি মােবাইলে ফোন করে জানান যে, সাতকানিয়া থানাধীন দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার পক্ষ হতে সংগৃহীত কোরবানির পশুর চামড়াবাহী পিকআপ আনােয়ারা থানায় আটক করা হয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে অফিসার ইনচার্জ তাৎক্ষণিক উক্ত এসআইকে আটককৃত পিকআপটি দ্রুত ছেড়ে দিতে বললে উক্ত এসআই তাৎক্ষণিক গাড়িটি ছেড়ে দেন। সংবাদে উল্লিখিত ৩ ঘন্টা ধরে চামড়াবাহী গাড়ি থানায় আটকে রাখার বিষয়টি যথার্থ নয়। ড্রাইভার ও হেলপারসহ অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদে মিডিয়ায় উল্লিখিত পুলিশ কর্তৃক চাঁদা দাবি বা অশোভন আচরণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালােচনায় দেখা যায়, কোরবানির পশুর চামড়াবাহী পিকআপটি সর্বমােট ৩৬ মিনিট থানায় অবস্থান করেছে। উক্ত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত চামড়া পঁচে যাওয়ার দাবিটি কোনোভাবেই সঠিক নয়। অসত্য তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়াসহ জেলা পুলিশের সকল সদস্য মর্মাহত হয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জেলার অধিবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তায় দিন-রাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ঈদ-উল-আযহা পূর্ববর্তী সময় হতে জনগণের যাতায়াত, কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা প্রদানসহ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিয়ােজিত রয়েছে।
এছাড়াও জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের সাথে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। চটগ্রাম জেলা পুলিশ গণমাধ্যমের কাছে আশা করে যে, গণমাধ্যমকর্মীরা জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকর সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পুলিশ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক মনােভাব সৃষ্টি করবেন না।
সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখাসহ সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে জেলা পুলিশ।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :