প্রতিবছর বন্যায় বাংলাদেশে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্ব গবেষণা সংস্থাগুলো। সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও চলমান বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও কৃষি অধিদফতর বলছে, জাতীয় পর্যায়ে তেমন প্রভাব ফেলবে না জুনের এই দুর্যোগ।
যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিক্স বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে বছরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। এছাড়া সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ৫০ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমির ফসল, ৫ লক্ষাধিক কৃষক ও আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
পাহাড়, হাওড়, জলাভূমির পাশাপাশি বিস্তৃত পরিসরে নানা ফসলের চাষাবাদ হয় সিলেট অঞ্চলে। অন্যদিকে বৈচিত্র্যময় ফসলের সম্ভার উত্তরাঞ্চল। তবে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে দেশের এই দুই অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বন্যার। যা বিশেষ করে কৃষকের লালিত স্বপ্ন পরিণত করে ধ্বংসলীলায়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটে কয়েকদিনের বন্যায় পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। ভেসে গেছে মাছের খামার, নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। চোখ রাঙাচ্ছে উত্তরের পদ্মা, যমুনা, করতোয়া নদীতে অতিরিক্ত পানির জোয়ার। এখন পর্যন্ত কত ক্ষতি হয়েছে, তা জরিপ না হলেও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই বন্যায় শুধু হাওড় এলাকা নয়, বরং সমস্ত সিলেট অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিলেটে ফসলসহ অন্যান্য সব উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বন্যার কারণে।
তবে কৃষি বিভাগের মতে, জুন মাসের এ বন্যায় সংকট তৈরি হবে না খাদ্য নিরাপত্তায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি- বোরো ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। তবে বন্যার্ত অঞ্চলগুলোতে শাক-সবজির আবাদসহ সাময়িক ক্ষতি হলেও, সেই ক্ষতি পূরণ করে নেয়া সম্ভব।’
প্রাকৃতিক এসব আঘাতে ফসলের ক্ষতি নির্ণয়ে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে কৃষি অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কোনো টাস্কফোর্সের কাজ দেখা যায় না এইসব সময়ে। বন্যার পূর্বাভাস দেয়া, কোন অঞ্চল বেশি বন্যার শিকার হচ্ছে, কোন কোন অঞ্চলে কম হচ্ছে, এইসব ভেবে সেই অনুযায়ী আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখা যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বন্যায় প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :