ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে তার তিনটি ফোন উদ্ধারে ঝিনাইদহে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই তিনটি মোবাইল উদ্ধার করা গেলে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা রহস্যের অনেক তথ্যাদি মিলবে। কারণ, ওইসব মোবাইল থেকেই গ্যাস বাবু আনার হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
বুধবার (২৬ জুন) সকালে ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযমের নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। মোবাইল উদ্ধারে পুকুরে নামানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও পেশাদার জেলেদের। সঙ্গে ফেলা হচ্ছে মাছ ধরার জাল।
কারাগার থেকে গ্যাস বাবুকেও ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়েছে। অভিযানের রয়েছেন আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর ডিবির সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। এছাড়াও ঝিনাইদহের বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস বাবু আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে মোবাইলগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন, তা বলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করে বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারে নামা হয়েছে।
আদালতের জবানবন্দিতে গ্যাস বাবু বলেছেন, মিন্টু নির্দেশে তিনি পায়রা চত্বরের একটি ফিলিং স্টেশনের পাশের পুকুর ও স্টেডিয়ামের পাশে আরেকটি পুকুরে ওই ফোনগুলো ফেলেন।
এর আগে গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালানো হবে।
তবে আলামতগুলো যাতে কেউ সরিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই গোয়েন্দাদের তরফ থেকে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে নজরদারি বাড়ার জেলা পুলিশ।
এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গ্যাস বাবু জানিয়েছিলেন, তার তিনটি মোবাইলগুলো হারিয়ে গেছে। এজন্য তিনি জিডিও করেন। কিন্তু আদালতে জবানবন্দিতে সেগুলো মিন্টুর নির্দেশে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন।
হারুন বলেন, এই মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে বলে মনে করছি। না হলে গ্যাস বাবু মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন?
গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। তবে এই সংসদ সদস্যের মরদেহ বা দেহাংশ এখনও মেলেনি।
এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলায় শিমুল ভূইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূইঁয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মামলার আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ। নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকেও কলকাতায় নেয়া হয়েছে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ভারতের কাছে শাহীন মোস্ট ওয়ান্টেড। শাহীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত চেষ্টা করবে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :