ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার দুই আসামি ফয়সাল ও মুস্তাফিজ পাহাড়ের একটি মন্দিরে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, তারা বিভিন্নভাবে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল।
বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় দুই আসামিকে নিয়ে হেলিকপ্টারযোগে ৩০০ ফিটের পূর্বাচলে ১৮ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ারে অবতরণের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
হারুন বলেন, ‘গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে থেকে ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ কিলিং মিশনে অংশ নেন। মূল ঘাতক ছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। বিভিন্ন জায়গায় পলাতক দুই আসামির অবস্থানের তথ্য পাচ্ছিলাম। অবশেষে মঙ্গলবার জানতে পারি তারা খাগড়াছড়ির গহীন পাহাড়ে রয়েছে।’
ফয়সাল ও মুস্তাফিজ নাম পরিবর্তন করে পলাশ দাস ও শিমুল রায় নাম ধারণ করে ছদ্মবেশে সীতাকুণ্ডের পাথাল কালীমন্দীরে ২৩ দিন ছিলেন বলেও জানান হারুন।
তিনি বলেন, ‘আনার হত্যার পর এই দুই আসামি ১৯ মে বাংলাদেশে আসে। ২০ মে তাদের দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেফতার করাই এখন মূল টার্গেট বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা হারুন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্সকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি রয়েছে, তারাও চেষ্টা করছে ধরার। আমরাও চেষ্টা করছি।
এর আগে দুপুরে পার্বত্য এলাকার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে আনার হত্যার দুই আসামি ফয়সাল ও মুস্তাফিজকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে হেলিকপ্টারযোগে তাদের ঢাকায় আনা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবির কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
এদিকে, আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে হত্যার আলামত ও মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযান চালচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার (২৬ জুন) দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুলিশের ভ্যানে নিয়ে আসা হয় শহরে। পরে তাকে পায়রা চত্বর সংলগ্ন গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে একটি পুকুরের কাছে নিয়ে যায় পুলিশ। সে সময় পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে বাবুর কাছ থেকে শুনে জেলেদের নামিয়ে অভিযান চালানো হয়।
অভিযান শেষে দুপুর ১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্ত্বর এলাকায় হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনারী, অর্থ যোগানদাতা ও কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া অনেককে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মুস্তাফিজ ও ফয়সাল নামে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অভিযান চলছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেপ্তারে গতকাল যশোরে অভিযান চালানো হয়েছে। আজ চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালাবো। মোস্তাফিক এবং ফয়সাল যেখানেই থাকুক তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের ওপর কোনো মহলের চাপ নেই। ’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আনার। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগরের বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের।
চারদিন পর হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে সেখানে মরদেহ মেলেনি।
একুশে সংবাদ/ন.দ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :