AB Bank
ঢাকা বুধবার, ০৩ জুলাই, ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কোটি কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদের মালিক এনবিআরের ফয়সাল


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩:১৬ পিএম, ২৮ জুন, ২০২৪
কোটি কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদের মালিক এনবিআরের ফয়সাল

অবৈধ ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রথম সচিব (কর), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকায় কর্মরত কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।  

২০০৫ সালের ২ জুলাই ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি প্রথম সচিব (কর), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকায় কর্মরত আছেন।

সেই থেকে এ পর্যন্ত ফয়সাল ও তার স্বজনরা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র; ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং ফিন্যানশিয়াল প্রতিষ্ঠানে ছয় কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা এবং ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদসহ মোট ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০৮ টাকা মূল্যের বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অর্থ অর্জনের ক্ষেত্রে তাদের বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ওই অর্থ উপার্জন করেছেন।  

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল, তার স্ত্রী ও স্বজনদের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব ও ১৫টি সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত।

৮৭টি ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ এবং ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্য, আয়করদাতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎসহ অবৈধ অর্থ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি অবৈধ অর্থের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন। শুনানি শেষে আদালত তার সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেন।

গতকাল আদালতে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্য সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ এই সম্পদ জব্দের আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তাঁর অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে নানা কার্যকলাপ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে তিনি ও তাঁর স্বজনদের অপরাধলব্ধ সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছেন। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বর্ণিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানি লন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বজনদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধে ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন-ব্যাংকিং ফিন্যানশিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানত থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) এবং স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাচমেন্ট) করা প্রয়োজন।

কত সম্পদ জব্দ?

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছেন আদালত। পাশাপাশি ফয়সালসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফয়সালের স্ত্রী আফসানাসহ চারজনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে চারটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সাল ছাড়া অন্য যাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে, তারা হলেন—শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের তিন হাজার ২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।

সাতশ’র বেশি হিসাব খুলে লেনদেন: আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তাঁর নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদ পূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ এনে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে ওই অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সব শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় ওই লোকজন ছাড়াও আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নামে সাত শর বেশি হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শ্বশুরের নামে সম্পদ: কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট কিনেছেন। ওই প্লট ক্রয়ে ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা মাহমুদা হাসানের ওয়ান ব্যাংক, ইকুরিয়া শাখার হিসাব থেকে দেওয়া হয়েছে। আদিবা ট্রেডিংয়ের (মালিক কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল) শাহজালাল ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার হিসাব নম্বর ৪০০৭-১২৪০০০০০১৯৪ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড বরাবর এক কোটি টাকা ইস্যু করা হয়। ওই টাকা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের হিসাব থেকে গেলেও সম্পদ অর্জন করেছেন শ্বশুরের নামে।


একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা

Link copied!